
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চে কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর উদ্যোগে প্রকৃত সত্যের সন্ধানে যোগদান করলেন ধনঞ্জয়েরই ফাঁসুরে নাটা মল্লিকের ছেলে এবং তাদের সম্পূর্ন পরিবার । মহালয়ার দিন কলকাতার বিখ্যাত গঙ্গার ঘাট বাবুঘাটে একটি ঐতিহাসিক তর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চলেছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চ । গঙ্গার ঘাটে সকাল ঠিক সাড়ে নয়টার সময় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, হেঁতাল পারেখ এবং ফাঁসুরে নাটা মল্লিকের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করে প্রথমে একটি তর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে এবং তারপর বিশ্ব শান্তির কামনায় থাকছে একটি সংক্ষিপ্ত আগমনী অনুষ্ঠান । অনুষ্ঠানে মঞ্চের প্রায় শতাধিক সদস্যের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন ফাঁসুরে নাটা মল্লিকের ছেলে তারক মল্লিক স্বয়ং । চন্দ্রচূড় বাবু সহ মঞ্চের সদস্যদের বক্তব্য সম্ভবত আসল অপরাধীকে আড়াল করতে রাষ্ট্র শক্তি একজন হতদরিদ্র পুরোহিত ঘরের সন্তান ধনঞ্জয়কে চোদ্দ বছর জেল খাটার পরও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে । আমরা জানি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা যায়না কিন্তু মানুষের বিশ্বাস এবং গবেষণার নির্যাস বলছে এই মামলার পুনর্বিচার হলে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর এত বছর পরেও উনি, ওনার পরিবার এবং বাঁকুড়া জেলার ছাতনা অঞ্চলের অধিবাসীরা ধর্ষক পরিচয় থেকে মুক্তি পাবেন । এতে একদিকে যেমন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের আত্মা শান্তি পাবে সেই রকম আসল অপরাধী চিহ্নিত হলে হেঁতাল দেবীর অতৃপ্ত আত্মাও শান্তি পাবেন । শান্তি পাবেন ফাঁসুরে নাটা মল্লিকের আত্মাও কারণ উনি এমন একজন ব্যক্তিকে অপরাধী জেনে ফাঁসি দিয়েছেন যেখানে আসল অপরাধী হয়তো ধনঞ্জয় ছিলেন না । ফলে সিস্টেম ওনাকে দায়িত্ব পালন করাতে গিয়ে সম্ভবত খুনি বানিয়ে দিয়েছে অথচ এখানে ওনার কোন দোষ নেই । ধনঞ্জয় মামলা আসলে বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে কারণ এই কেসে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে । কারো অনুপস্থিতিতে তার বাড়ি থেকে কিছু জিনিস যেমন ঘড়ি, বোতাম এবং গলার চেইন ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়ে কখনোই কাউকে ফাঁসির মত চরমতম শস্তি দেওয়া উচিৎ নয় । যে অভিযুক্ত সে ফেরার হওয়ার পরও বাড়িতে চুরি করা জিনিসগুলো রেখে দিল কখন পুলিশ এসে উদ্ধার করবে এটা হাস্যকর । যারা ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিয়েছিল তাদের অধিকাংশই পরে স্বীকার করেছে পুলিশ ভয় দেখিয়ে নিজেদের মত করে বয়ান লিখে সই করিয়ে নিয়েছে । কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী যারা হতে পারতেন তাদের আদালতে বয়ান দিতে ডাকাই হয়নি । সেলুলজিকাল টেস্টের অধিকাংশ রিপোর্টই অসমাপ্ত এবং সেখানে লেখা আছে “নো কমেন্টস”। ফরেনসিক ল্যাবে পাওয়া গলার চেইন এক জায়গায় লেখা আঠেরো ইঞ্চি আরেক জায়গায় লেখা বাইশ ইঞ্চি । পুলিশের কুকুরকে যে রক্তমাখা রুমাল এবং কাগজ শোকানো হয়ে ছিল সেগুলি পরে ভিজে অবস্থায় পাওয়া যায় । এই বিষয়ে তদন্তের উপর ভিত্তি করে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ধনঞ্জয় নামে যে সিনেমা হয়েছে সেটি দেখলে পরিস্কার বোঝা যায় এটি অনার কিলিং এর কেস হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক । আসলে সোনার দোকানের মালিক পারেখ পরিবারের আর্থিক প্রতিপত্তির কাছে তৎকালিক প্রশাসন বিক্রি হয়ে যায় এবং বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে । ফলে আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই ধনঞ্জয়কে খুন করেছিল রাষ্ট্রশক্তি । তাই মানুষের বিশ্বাস একশ শতাংশ সঠিক, বিচারের বাণী আজও নীরবে নিভৃতে কাঁদে । আমরা ইতিপূর্বেই কেস রিওপেন করার আবেদন যেমন রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াই চন্দ্রচূডের কাছে করেছি সেই রকম আমরা নিজের হাতে এই বিষয়ে ডেপুটেশন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনমন্ত্রী শ্রী মলয় ঘটক এবং কারামন্ত্রী শ্রী চন্দ্রনাথ সিনহার কাছে দিয়েছি । আমাদের লক্ষ্য একদিকে যেমন নির্দোষকে প্রকৃত জাস্টিস পাইয়ে দিয়ে তার পরিবার এবং ওই অঞ্চলের মানুষদের কলঙ্ক মোচন করা সেই রকম আমাদের আরো বড় উদ্দ্যেশ্য ভারতবর্ষে একটি ত্রুটিহীন বিচার ব্যবস্থা স্থাপন করা যাতে ভবিষ্যতে আর কাউকে ধনঞ্জয় না হতে হয় । এই লড়াইটা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নয়, আমরা যারা যারা অপরাধহীন সমাজ ব্যবস্থা এবং ত্রুটিহীন বিচার ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি তাদের প্রত্যেককেই এগিয়ে এসে এই যুগান্তকারী আন্দোলনে সামিল হতে হবে । মৃত্যুর এত বছর পর কলঙ্ক মোচন হলে একদিকে যেমন ধনঞ্জয় বাবু এবং হেঁতাল দেবী উভয়ের আত্মা শান্তি পাবে সেই রকম আমাদের দেশ এবং আমাদের রাজ্যও পৃথিবীর বুকে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যে দেরিতে হলেও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে “সত্যমেব জয়তে” ।