
সুনন্দা দত্ত, হুগলি : কথায় আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। সেই বাঙালির রসনা তৃপ্তির নতুন ঠিকানা হল ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের মাছের মেলা। রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা থেকে শুরু করে শুটকি। কোন মাছ নেই এই মেলাতে! আর এই হরেক রকম মাছ দেখে কার্যত আহ্লাদে আটখানা রসিকজন। সাধারণ চুনোপুঁটি থেকে ৫০ কিলো পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয় এখানে।
এই মেলা ৫১৬ বছরের পুরনো। মেলার সূত্রপাত হয় গোবর্ধন গোস্বামীর ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরই। ওই এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তাঁর ছেলে রঘুনাথ সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি দীক্ষা নিতে পানিহাটিতে স্বামী নিত্যানন্দের কাছে যান। কিন্তু, তাঁর বয়স মাত্র ১৫ হওয়া দীক্ষা দেননি স্বামী নিত্যানন্দ। বরং তাঁর ভক্তির পরীক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন তিনি। দীর্ঘ নয় মাস পর বাড়ি ফেরেন রঘুনাথ। সেই আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গ্রামের মানুষ তার ভক্তির পরীক্ষা নিতে কাঁচা আমের ঝোল ও ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করে। তিনি তখন বাড়ির পাশে আম গাছ থেকে জোড়া আম ও পাশের জলাশয়ে জাল ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী জাল ফেলতেই মেলে জোড়া ইলিশ। এরপর থেকে প্রত্যেক বছর ভক্তরা রাধা গোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন করে থাকেন। তখন থেকেই ১ মাঘ উত্তরায়ন মেলা চলে আসছে।
দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী, পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে আসেন এই মাছের মেলাতে।
হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা,বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় ভিড় করেন। ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে এখানে মাছ বিক্রি হয়।