
ইন্দ্রানী চক্রবর্তী:জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সমর্থনে এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত দফা দাবি নিয়ে ধর্ণায় শিক্ষার্থী, অধ্যাপক এবং প্রাক্তনীরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী সংগঠনগুলির অংশগ্রহণে তৈরি মঞ্চ জেইউ ফর জাস্টিসের তরফ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার সময় ধর্ণায় বসছেন তাঁরা।
মঞ্চের প্রতিনিধি আকাশ গুপ্ত যিনি একাধারে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্যও ওঙ্কার কে জানিয়েছেন যে যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের বাইরে তাঁরা ধর্ণায় বসছেন এবং এই অবস্থান চলবে।
জেইউ ফর জাস্টিসের দাবির সাপেক্ষে আকাশ গুপ্ত জানিয়েছেন, “শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে তা নয়, সার্বিকভাবে এই মুহূর্তে সমাজে আমরা যে আন্দোলনটাকে দেখতে পাচ্ছি সেটা জেন্ডার জাস্টিসের প্রসঙ্গে হোক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার প্রসঙ্গে হোক, সেই বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই আমরা ধর্ণায় বসছি জুনিয়র ডাক্তারদের যে আন্দোলন চলছে সেটার সংহতিতে। এখন অবস্থান চলবে।”
আকাশ আরও জানান, “আমরা GNCASH দাবি জানাচ্ছি। মানে জেন্ডার সেন্থিটাইজেশন কমিটি এগেইন্সট সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট(GNCASH), যেটা একটা ইলেক্টেড বডি রাদার দ্যান আ সিলেক্টেড বডি যেমন ICC বা ইন্টারনাল কম্পলেইন্স কমিটি। আইসিসি আমাদের ক্যাম্পাসে আছে। কিন্তু তার কার্যধারা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে যা আমরা চিহ্নিত করেছি যেটার জন্য বছরের পর বছর এমন হয়েছে অনেক কেস খারিজ হয়ে গেছে। যেমন কোন স্টুডেন্ট গ্রাজুয়েট করে গেলে কেস ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যাচ্ছে বা এই জাতীয় আরও সমস্যা স্টুডেন্টরা ফেস করছে ICCর জন্য। তাই এটাকে বন্ধ করে আমরা ‘GNCASH’ আনার চেষ্টা করছি যেটা বিশাখা গাইডলাইন ধরে তৈরি হয়েছিল। ২০১১-১২ নাগাদ এটা জেএনইউতেও চালু হয়েছিল কিন্তু ২০১৭ সাল নাগাদ তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ICCকে নতুন করে নিয়ে আসা হয়। দেখা যাচ্ছে আজকের যে বিজেপির শাসন এবং রাজ্যে তৃণমূলের অত্যাচার এই দুইয়ের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রে অবশিষ্ট ডেমোক্রেটিক স্পেসটুকুও প্ল্যানফুলি খর্ব করা হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার যাদবপুরে জেইউ ফর জাস্টিসের ধর্ণার দাবিগুলি হল,
১) আরজি কর-কাণ্ডের বিচার এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা যে দাবি জানিয়েছেন, যাদবপুর তার পাশে রয়েছে। অবিলম্বে সেই দাবিগুলি পূরণ করতে হবে।
২) ‘অভয়া পরিক্রমা’র সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, অবিলম্বে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
৩) অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
৪) র্যাগিংকাণ্ডে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী ছিল, তা জানতেও তদন্ত করতে হবে।
৫) যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে লিঙ্গ সংবেদনশীল কমিটি (GNCASH) গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (ICC) পুনর্গঠন করতে হবে। সেখানে যে অভিযোগগুলি স্থগিত রয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখতে হবে।
৬) অ্যাকাডেমিক এবং নন-অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে সম্প্রতি যত পারিশ্রমিক বৃদ্ধি হয়েছে, তা কমিয়ে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পারিশ্রমিকের কাঠামো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
৭) ‘থ্রেট কালচার’ বা ভয় দেখানোর রাজনীতি শুধু যাদবপুর নয়, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বর্জন করতে হবে।