
নিজস্ব সংবাদদাতা : এসএসসি-র অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল তা খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদনও নেওয়া হয়। সেই কারণে এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। এই রায়ের ফলে আপাতত স্বস্তিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা।
এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় ছ’হাজার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এবং রাজ্য মন্ত্রিসভারও অনুমোদন পায়। এরপর এই শূন্যপদ তৈরি করার বিরুদ্ধে কলকাতা আদালতে মামলা হয় ২০২২ সালে। তখন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ওই অতিরিক্ত শূন্যপদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত নয়। এমনকি সিবিআই-কে আদালত নির্দেশ দেয়, প্রয়োজনে সেই সিদ্ধান্তে যুক্ত মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেই সময় আদালত এই বে-আইনি সিদ্ধান্তের পিছনে যুক্তদের শনাক্ত করতে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেয়।
৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬০০০ শিক্ষক এর চাকরি বাতিল হওয়ায় এই অতিরিক্ত শূন্য পদের দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন একাংশ। ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী জানান, এসএসসি ১৯৯৭ এর আইনে এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত আইনিভাবে বৈধ। আরো জানানো হয়, রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে রাজ্যপালের অনুমোদন নিয়েই এই শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালে।
এরপর এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায় ছ’হাজার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ওই অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে দু’পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি শোনার পরে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআই তদন্ত চালানো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি বেআইনি নয়। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষা দফতর বা এসএসসি এই ধরণের পদ সৃষ্টি করতেই পারে।
পাশাপাশি, এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শও নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। এই মন্তব্যের ভিত্তিতে আদালত জানিয়ে দেয়, এই বিষয়ে তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই এবং মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না শীর্ষ আদালত। ফলত হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়। এই রায়ের ফলে রাজ্য সরকার ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের উপর থেকে সম্ভাব্য সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের চাপ আপাতত সরল। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এটি রাজ্যের কাছে এক বড় স্বস্তি বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
প্রসঙ্গত, সোমবারই শিক্ষক নিয়োগে বিপর্যয়ের আবহে ‘যোগ্য’ চাকরি হারানোদের স্বার্থে পদক্ষেপ করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চে পর্ষদের তরফে একটি আবেদনও জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, শীর্ষ আদালতের পূর্ববর্তী নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। এর ফলে বহু প্রার্থী, যাঁরা প্রকৃত অর্থে যোগ্য এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন, তাঁরাও চাকরি হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে পর্ষদের আবেদন, যাঁরা প্রকৃতপক্ষে যোগ্য বলে বিবেচিত, তাঁদের নতুন করে নিয়োগ করা হোক অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অন্তত কাজে বহাল রাখা হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির স্বাভাবিক পাঠদান বজায় রাখা ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থেই এই আর্জি জানানো হয়েছে বলে পর্ষদের যুক্তি। এই পরিস্থিতিতে এসএসসিতে অতিরিক্ত শূন্যপদ (সুপারনিউমেরারি পোস্ট) তৈরি সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হওয়ায় বড়সড় স্বস্তি পেল রাজ্য সরকার।