
বিপ্লব দাশ : হাবাদ হাইকোর্টের একটি পর্যবেক্ষণকে ঘিরে বিচার ব্যবস্থার মধ্যেই টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সংবেদনশীলতা নিয়ে। তাই আরেকবার সেই কথাটাই উঠছে, বিচারের বাণী কী নীরবে নিভৃতে কাঁদে ! তাহলে কী এখনও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে শুধুমাত্র আইনের যান্ত্রিকতাই মানদণ্ড হয়ে আছে ! সমাজের গতিপ্রকৃতি বদলেছে, মূল্যবোধের অভিমুখ বদলেছে, সমাজ থেকে রাজনীতি স্বর্বস্তরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। সত্তর বছর আগে দুনিয়াটাই যেখানে ইতিহাস, সেখানে কি ইতিহাসের পৃষ্ঠা খুলে আমরা ন্যায়বিচার পর্যবেক্ষণ করবো ?
দিন সাতেক আগে একটি মামলায় এলাহবাদ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল নাবালিকার স্তন চেপে ধরা এবং তার পায়জামার ফিতে ছিঁড়ে দেওয়াকে কোনওভাবেই ধর্ষণ বা ধর্ষণের প্রচেষ্টা বলা যায় না। কথা হল, সেই বিতর্কিত আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। এলাহাবাদ আদালতের এই পর্যবেক্ষণের মধ্যে সংবেদনশীলতার অভাব আছে বলেও মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই স্থগিতাদেশের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধিতেও তার বিধান আছে।
তাহলে নিশ্চয়ই এই সংবেদনশীলতার বিষয়টি আইন প্রণেতাদের মাথায় ছিল। অর্থাৎ শুধুমাত্র আইনের ধারা অনুযায়ী বিচার ব্যস্থা চলতে পারে না। তার একটি বহুমাত্রিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে সেকথা বুঝেছিলেন তাঁরা। অন্তত শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশে সেটাই প্রমাণিত হয়। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ সরকারেরও প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে। কারণটা হল ওই মামলার ঘটনা প্রবাহ। সেই ঘটনাটি এক্ষেত্রে একটু বলে নেওয়া উচিত। নাহলে সংবেদনশীলতার অভাবটা বোঝা যাবে না। সেটা হল- ২০২১ সাল, উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জ, দুই যুবক প্রকাশ্য রাস্তায় ১১ বছরের এক নাবালিকার স্তন চেপে ধরে, তার পায়জামার ফিতে ছিঁড়ে সেটি টেনে নীচে নামানোর চেষ্টা করে। এই ঘটনারই মামলা চলছিল এলাহবাদ হাইকোর্টে। আদালতের মতে, ধর্ষণের চেষ্টা প্রমাণ করতে হলে ‘প্রস্তুতির স্তর’ অতিক্রম করে ‘আসল প্রয়াসের স্তরে’ পৌঁছতে হবে। অভিযোগের বিবরণে নাকি তা তা বলা নেই। এও জানানো হয়েছে, ধর্ষণের চেষ্টা ও প্রস্তুতির মধ্যে মূল পার্থক্য হল, সংকল্পের মাত্রা। এই মামলায় যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে বোঝা যায় না যে অভিযুক্তরা ধর্ষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছনোর সংকল্প করেছিল। রায় সামনে আসতেই শুরু হয় তরজা। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই বিতর্কিত রায়ে স্থগিতাদেশ দিল।
উপরে বিচার্য্য বিষয় হিসেবে যা পাওয়া গেল তাতে দোষ নির্দোষ, নিগ্রহ না দুর্ঘটনা কোনটাকে সত্য মানবে বিচার প্রার্থী ? এক্ষেত্রে কি ‘আইন মেনে অপরাধ’ এই শব্দবন্ধের আগমন ঘটে না ?