
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ কে হবে নির্ণায়ক? কার হাতে থাকবে বঙ্গ বিজেপির রাশ? লোকসভা ভোটের আগে তা আরও যেন প্রকোট হয়ে উঠছে বঙ্গ বিজেপিতে। খুব স্পষ্ট করে বলতে গেলে রাজ্য বিজেপি এখন কার্যত একাধিক ভাগে বিভক্ত। বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারী দলে আসার পর থেকেই রাজ্য বিজেপি র অলিখিত ‘নবাব’ তিনি।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হলেও পদ্ম শিবিরের চাবি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের বিধায়কের হাতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে হারানোর পর থেকেই দিল্লির নেতাদের চোখে কার্যত তিনি ‘হিরো’। নির্দ্বিধায় বলা যায় বাংলার জন্যে এই মুহূর্তে দিল্লি বিজেপি নেতৃত্বর কাছে এক ও একমাত্র ভরসার মুখ শুভেন্দু।
একদিকে শুভেন্দু। তো অপরদিকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আর
অন্যদিকে আবশ্যই দিলীপ- রাহুল সিনহারা। রাজনৈতিক মহলের মতে, যার একটা বড় প্রভাব কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এমনকী সামনে চলে আসছে রাজ্য বিজেপির দুর্বল সংগঠনও। একটু ব্যখ্যা তে আসলে বোঝা যাবে, আপাততঃ ৪২ শের মধ্যে মাত্র ৪ আসনে প্রার্থী ঘোষনা করতে পারে নি পদ্ম শিবির।
একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে আসন গুলোতে অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, বীরভূম ও ডায়মন্ডহারবার। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম আসনটিতে গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন বিজেপির কুনার হেমব্রম। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি অথচ সেই হাতে থাকা আসনে এখনো পর্যন্ত প্রার্থী ঠিক করতে পারল না বিজেপি।
অন্যদিকে আসা যাক ডায়মন্ডহারবারের কথায়, এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যে দুর্নীতি সহ একাধিক ইস্যুতে বিজেপি তথা শুভেন্দু অধিকারীর একমাত্র টার্গেট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রেই অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মত প্রার্থী দাঁড় করাতে পারল না পদ্ম শিবির। বাকি থাকা আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রেও একই অবস্থা পদ্ম শিবিরের। এই কেন্দ্র থেকেই বিজেপির টিকিটে ২ বার জয়ী হন বাবুল সুপ্রিয়।
যদিও পরে পদত্যাগ করে বর্তমানে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী। সেই আসনে প্রথমে প্রার্থী করে ভোজপুরি গায়ক পবন সিংকে। তবে শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে নিজেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ১ মাসের কাছাকাছি, এখনও পর্যন্ত আসানসোল কেন্দ্রে ও প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। একই অবস্থা বীরভূমের ক্ষেত্রেও। তিহার জেলে সকন্যা অনুব্রত মণ্ডল অপরদিকে জেলার দায়িত্বে থাকা কাজল শেখের সঙ্গেও বনিবনা নেই বীরভূম তৃণমূলের একটা বড় অংশের এক কথায় কার্যত গোষ্ঠী দ্বন্দ্বতে জেরবার বীরভূম জেলা তৃণমূল। অথচ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যে ভোট ময়দানে ফায়দা তুলবে বিজেপি! না সেই বীরভূমেই এখনও প্রার্থী ঘোষনা করতে পারলো না পদ্ম শিবির।
গোটা বিষয় নিয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাসের ব্যখ্যা, “আসলে দলের রাশ কার হাতে তা নিয়েই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বঙ্গ বিজেপি। একদিকে দিলীপ ঘোষকে তার মেদিনীপুর আসন থেকে সরিয়ে দিতে একসাথে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর কাছে রীতিমত দরবার করেন শুভেন্দু- সুকান্ত। সফলও হয়েছে তাঁরা। আর এই চার আসনে প্রার্থী না দেওয়া আসলে এই ক্ষমতার রাশ কার হাতে তা নিয়ে লড়াই এর ফল।” ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আসনে প্রার্থী নিয়ে রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরী হয়েছে।
যেমন কৃষ্ণনগরের প্রার্থী নদিয়ার রাজমাতা অমৃতা রায়, বারাসতের প্রার্থী স্বপন মজুমদার, বসিরহাট থেকে রেখা পাত্র, শ্রীরামপুর থেকে কবীর শংকর বোস, বর্ধমান- পূর্ব থেকে অসীম সরকার, কাঁথি, উলুবেড়িয়া সহ বেশ কয়েকটি আসন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিশ্বজিৎ দাস এর বক্তব্য,” এই আসন গুলোতে যারা প্রার্থী তারা আসলে শুভেন্দু অধিকারীর প্রার্থী বলে পরিচিত। কিন্তু আখেরে ভোট ময়দানে আদৌ কতোটা রান করতে পারবে এরা সেটা বড় প্রশ্ন। যেমন বসিরহাট এর রেখা পাত্র, সন্দেশখালির মুখ বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্ত মনে রাখতে হবে সন্দেশখালি কিন্ত সিঙ্গুর না নন্দীগ্রাম নয়, বরং আস্তে আস্তে সন্দেশখালি ইস্যুর গুরুত্ব কমছে। বা কৃষ্ণনগরের অমৃতা রায়, হঠাৎ করে দলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়ে গেলেন,কিন্তু জেলার সাথে কোনও যোগাযোগ যেমন নেই, তেমনই একদম জনপ্রিয় মুখও নন। যে মুখ মহুয়া মিত্রকে টক্কর দিতে পারে তেমন প্রার্থী নন অমৃতা রায়। আবার বারাসতের প্রার্থী স্বপন, যার বিরুদ্ধে খোদ দলের কর্মীরাই মাদক কারবারের অভিযোগ তুলছে। এটা মনে রাখতে হবে রাজ্যে সংগঠন না থেকে শুধুমাত্র মোদী ও শুভেন্দু হাওয়াতে লোকসভা নির্বাচন জেতা খুব কঠিন। আর তাই হচ্ছে বঙ্গ বিজেপিতে।”