
অরুপ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম : রোগ নিরাময়ে গ্রামের মানুষের ভরসা দেবীর পুজা। কথিত আছে বিগত কয়েক দশক আগে গ্রামে কোনো মহামারী দেখা দিলে, সেই সময় গ্রামের মানুষ রোগ নিরাময়ে মা শীতলার আরাধনা মেতে উঠতেন। প্রাচীন রীতি মেনে তাই আজও হয় মা শীতলার আরাধনা। শীতলা দেবী মূলত গুটিবসন্ত, জ্বর এবং অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য পূজিত হন।
লোকবিশ্বাস অনুসারে, শীতলার পূজা করলে পরিবারে রোগ ও কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং সন্তানরা সুস্থ থাকে। অরণ্য ঘেরা জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্গত গোপীবল্লভপুরের আশুই গ্রামের শীতলা মায়ের পুজো এবার ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করল। ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলখ্যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মন্দিরে মায়ের পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হল।

এদিন ২০ জন মহিলা ঢাকি ছিল আই শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ। মহিলা ঢাকি সহযোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার পর গ্রামবাসী ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়। এদিন আশুই গ্রামের শীতলা মায়ের মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে ১১৮ জন মহিলা শোভাযাত্রা করে সুবর্ণরেখা নদী থেকে জল এনে মূর্তি ও মন্দির শুদ্ধিকরণ করেন। তারপর প্রাচীন প্রথা মেনে নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে দুদিনের নাম যজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রী পাট গোপীবল্লভপুরের মহন্ত মহারাজ কৃষ্ণ কেশবানন্দ দেব গোষ্মামী এবং গোপীবল্লভপুর থানার আইসি কার্তিক চন্দ্র রায় প্রমুখ। এই মহাযজ্ঞ সম্পর্কে সনাতন দাস, অঞ্জলি দাস, সোমা দাস, সুকুমার দাস, সমির দাসরা জানান, মন্দিরে মায়ের নিত্য পূজা প্রচলন রয়েছে। আগে মায়ের মূর্তি খানিকটা ভেঙে যাওয়ার কারণে নতুন পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হল। আগামী দিনেও মানুষের ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে এই পুজো অনুষ্ঠিত হবে এটা মনে করেন গ্রামের মানুষ। বর্তমান ডিজিটাল যুগের প্রবেশ করেও গ্রামের মানুষ যে ডাক্তার অসুদ পথ্য বাদ রেখে, ধর্মীয় রীতি-নীতিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, এই দিন তা দেখা গেল। যদিও এইদিন মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে আশুগ্রামে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল নজর কাড়ার মতো।
ভিডিও দেখুন-