
বিপ্লব দাশ : প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম নাগপুরের সঙ্ঘ সদরে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই হঠাৎ নাগপুর সফর নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে জাতীয় রাজনীতির। আলোচনার বিষয়- কেন হঠাৎ আরএসএস সদরে প্রধানমন্ত্রী ! বেশ কিছু সম্ভাবনাকে সামনে রেখে রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। নানাজনের নানা মত। যার মধ্যে উঠে এসেছে দুটি জোরালো সম্ভাবনা। এক, ’২৯-এর সাধারণ নির্বাচনে কে হবেন নরেন্দ্র মোদীর উত্তরসূরি। দুই, বেঙ্গালুরুতে জাতীয় কর্মসমিতির অধিবেশনের পর বিজেপির নতুন সভাপতি নির্বাচন।
এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ বোমা ফাটালেন উদ্ভব পন্থী শিবসেনা নেতা তথা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। তিনি বলেছেন, মোদী অবসর নিতে চলেছেন। তাই সঙ্ঘ-সদরে গোপন বৈঠকে তাঁর উত্তরসূরি নিয়ে কথা হয়েছে। সঞ্জয় এও দাবি করেছেন, নেতৃত্বের বদল চাইছে আর এস এস এবং দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন মহারাষ্ট্র থেকেই। উদ্ভব ঠাকরে ঘনিষ্ট এই সেনা সাংসদরে কথা উড়িয়ে দিতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। অবশ্য ঘোলা জলে মাছ ধরা অত সহজ নয়।
এমনিতেই বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭৫ বছর বয়সের পর অবসর নিতে হয়। ২০২৯-এর সাধারণ নির্বাচনে মোদীর বয়স হবে ৭৮ বছর। ফলে মোদীকে ’২৯-এর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে হলে গঠনতন্ত্র ভাঙতে হবে, যা কার্যত অসম্ভব। অন্যদিকে, গত নির্বাচনগুলিতে বিজেপি সভাপতি নাড্ডার মতিগতি ভালো চোখে দেখেনি সঙ্ঘ শিবির। কারণ, তিনি বলেছিলেন, আর এস এসের প্রয়োজন থেকে বিজেপি বড় হলেও সে এখন সক্ষম। তাতে যুক্ত হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর “বিকশিত ভারত”। যার মধ্যে উপেক্ষার বার্তা পাচ্ছে রাষ্ট্রিয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।
বেঙ্গালুরুতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সভার আগে বিজেপি ও আর এস এসের সাম্প্রতিক ফাটল কী বোজাতে পারবে মোদীর নাগপুর সফর ? এটা সময় বলবে। এখন শুধু দেখার বিষয় বিজেপির পরবর্তী সভাপতি কে হচ্ছেন। কারণ বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উত্তরসূরি কে হবেন তার শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কিন্তু আরএসএস। এমনিতেই মোদী জমানায় বিজেপির ব্যক্তি নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার ঘোর বিরোধী তারা। ২০১৪ সালের পর বিজেপির মোদী ব্র্যান্ড অফ পলিটিক্স হয়ে ওঠায় সঙ্ঘ শিবিরের ঘোরতোর আপত্তি রয়েছে। এমন কি, বিজেপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের এজেন্ডা ম্লান হয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছে না আর এস এস। এমন পরিস্থিতিতে মোদীর এই নাগপুর সফর সঙ্ঘ শিবিরের কতটা আস্থা অর্জন করতে পারবে তা বলা মুশকিল। তবে বিজেপির জাতীয় মঞ্চে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে তার ইংগিত পাওয়া গেছে মোদীর নাগপুর সফরে।