
নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা : বেআইনি ভাবে গর্ভপাত করাতে গিয়ে প্রাণ গেল এক গৃহবধূর। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকের বালি ২ নম্বর অঞ্চলের। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে বেআইনিভাবে ভ্রূণ নষ্ট করার চেষ্টা চলাকালীনই মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর। নার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
মৃতা কল্পনা সরদার (মন্ডল), স্বামী সুকুমার সরদার গোসাবার বালি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। স্থানীয়দের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গোসাবা এলাকার হেমনাথ নার্সিংহোমে। সেখানেই ভ্রূণ নষ্ট করার প্রক্রিয়া চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ, নার্সিংহোমের চিকিৎসক প্রবীর সরদারের ভুল চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয়েছে কল্পনার।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঘটনার পরেই হুড়োহুড়ি শুরু হয় নার্সিংহোম চত্বরে। অভিযোগ, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রশাসনিক স্তরে শুরু হয় তৎপরতা। পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়েই রাতে তড়িঘড়ি দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। যে বা যাঁরা মৃতদেহ নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের পরিচয় নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পরিবারের কেউ নয় বলেই দাবি মৃতার পরিজনদের।
ঘটনায় আরও একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেমন, চিকিৎসক প্রবীর সরদারের চিকিৎসা সংক্রান্ত যোগ্যতা কতটা? কোথা থেকে তিনি মেডিক্যাল ডিগ্রি পেয়েছেন, তা নিয়েও নেই কোনও স্বচ্ছতা। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমটির বৈধ সরকারি লাইসেন্স আদৌ আছে কি না, সেটাও এখনও পরিষ্কার নয়।
এই ঘটনা ঘিরে সরব হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁদের অভিযোগ, গোসাবার মতো দুর্গম এলাকায় বহুদিন ধরেই বেআইনি নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল বেহাল। গোসাবা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিকাঠামো ও চিকিৎসকের অভাবে বহু সময়েই প্রসূতিদের নদী পেরিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে যেতে হয়। মাঝপথে নৌকো বা অ্যাম্বুল্যান্সেই সন্তান জন্মের ঘটনাও নতুন নয়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেআইনি নার্সিংহোমগুলি দেদার ব্যবসা চালাচ্ছে।
একাংশের সন্দেহ, টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে মৃতার পরিবারের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টাও হয়েছে। ফলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কোনও পদস্থ আধিকারিক এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। পুলিশের তরফেও এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত বিবৃতি মেলেনি। মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়। তবে গোসাবার এই ঘটনা ফের একবার প্রকাশ্যে নিয়ে এল সুন্দরবনে স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা ও বেআইনি চিকিৎসা ব্যবসার বাস্তব চিত্র।