
অপরূপা কাঞ্জিলাল: রাস্তায় বেরোলেই মনে হয় খাই খাই? অথবা অফিস ফেরত পথে একটু টুকটাক? প্রাণে চায় জ্বিহ্বেও চায়? অন্তত নিদেনপক্ষে এই গরমে নানা রকম শরবত হাতছানি দেয় প্রায়শই। কিনতু এখানেই দাঁড়িয়ে শিয়রে শমন। অজান্তেই শরীরের বিরাট ক্ষতি করছেন। না একথা আমার না, অযাচিত জ্ঞানও দেওয়ার বিষয় এটা নয় কারণ এই বিষয়ে সতর্কবার্তা শুনিয়েছে ICMR। কি বলছে সেই রিপোর্ট জানুন।
গত বুধবারই ভারতীয়দের জন্যে ১৭ দফা ডায়েট গাইডলাইন প্রকাশ করেছে তারা। যা জানলে চমকে উঠতে হয়। ICMR এর প্রকাশিত সেই নির্দেশিকার ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসীর ৫৬.৪% অসুখবিসুখের নেপথ্যে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস। সে জন্যেই ২৮.৪% টিন-এজার ভুগছেন অ্যানিমিয়ায়, ১০.৪% কিশোর-কিশোরী প্রি-ডায়াবিটিক। শুধুই কি তাই! যে কারণে এখনকার প্রজন্ম প্রতিদিন যাচ্ছেন জিমে, রোগা হয়ে সুন্দর হওয়ার জন্য কিংবা মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে। তার কি হবে? সেটাও চিন্তার বিষয়। বলছি কারন অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া ও জীবনশৈলীর কারণেই প্রায় ২৩.৫% ভারতীয় ওবেসিটির শিকার। অর্থাৎ এতো শারীরিক কসরৎ, পরিশ্রম সবই বৃথা যায় অফিস ক্যান্টিনে কলিগদের সাথে খাবার আড্ডায় কিংবা সপ্তাহান্তের আউটিং এ মশলাদার নানা আয়োজনে। যদি বলেন ওভার-ওয়েট না তবু নিদেনপক্ষে ভুঁড়ি রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি দেশবাসীর একথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।এ সবেরই নেপথ্যেই রয়েছে পাতে নুন-চিনি-তেল ককটেলের অতিরিক্ত ব্যবহার। প্রথম ‘ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর ইন্ডিয়ান্স’ প্রকাশ করেছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের অধীন হায়দরাবাদের সংস্থা এনআইএন। পরবর্তীতে আরো কয়েকবার সেই নির্দেশিকা পরিমার্জন করা হয়েছিল। তবে দেখা গিয়েছে রোগব্যাধির চরিত্র অনেকটাই বদলেছে যার কারণ হিসাবে সামনে আসছে বর্তমান খাদ্যাভ্যাস। তাই দেখা দেয় নতুন করে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা। সম্প্রতি এনআইএন-এর অধিকর্তা আর হেমলতার নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে আইসিএমআর।
গবেষণায় যা উঠে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছেপ্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দেশবাসীকে। দিনে ২০-২৫ গ্রামের বেশি চিনি খেতে নিষেধ করা হয়েছে। ক্যালোরির উৎস হিসেবে চিনি বা মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে বড়জোর ৫%। ৪৫% ক্যালোরি নিতে হবে চাল, গম, মিলেটের মতো শস্য থেকে। ১৫% ক্যালোরি নিতে হবে ডাল, বিনস ও মাংস থেকে। বাকি ৩৫% ক্যালোরির জন্যে বাদাম, শাকসব্জি ও ফলের মতো ফাইভার সমৃদ্ধ খাবার এবং দুধ খাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে অনেকই শরীরে বেশি পরিমাণে প্রোটিন গ্রহন করায় বিশ্বাস করেন তাদের ক্ষেত্রেও রয়েছে সাবধানী হওয়ার কথা। তথ্য বলছে প্রতি কেজি বডি-ওয়েটের জন্যে বড়জোর ১.৬ গ্রাম প্রোটিনই যথেষ্ট। অতিরিক্ত বডি-মাস তৈরির জন্যে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াই ভালো।এই গাইডলাইনকে সমর্থন করছেন বেশির ভাগ চিকিৎসকই।তাদের মতে মেটাবলিক সিন্ড্রোম সংক্রান্ত রোগভোগ ঠেকাতে খাওয়াদাওয়া সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানতেই হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো পাউরুটি, বিস্কুট ও প্রায় সব রকমের ফাস্ট ফুড। এতে প্রচুর পরিমাণে ময়দা, নুন আর চিনি থাকে যা খালি চোখে বোঝা যায় না। তাই নুন-চিনি-তেলের মাত্রা কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি হলে উচ্চ রক্তচাপ ও করোনারি হার্ট ডিজ়িজ়ের বহর ব্যাপক হারে কমবে। ৮০% পর্যন্ত কমে যাবে ডায়াবিটিসের সমস্যাও। কাজেই সাধু সাবধান হওয়ার কোনোও বিকল্প নেই। তাই আজই পরিবর্তন আনুন খাদ্যাভ্যাসে আর রাশ টানুন অসুস্থতা এবং ওষুধ এর লম্বা লিস্টে।