
বিশেষ প্রতিনিধি, ওঙ্কার বাংলা : সৌন্দর্য গ্রাস করেছে আতঙ্ক। পহলগাঁওয়ে পাইন ঢাকা পাহাড়ের পাকদন্ডী খাদ বেয়ে বয়ে চলা লিডার নদীর ধারে এখন খাঁ খাঁ শূন্যতা। অথচ পর্যটকদের অন্যতম সেরা আকর্ষণ এই পহেলগাঁওয়ের লিডার নদীর উপকূল। প্রায় ৩০ কিমি দীর্ঘ এই নদীর তীরে রয়েছে অসংখ্য হোটেল ও গেস্ট হাউস। জঙ্গি হানার আগে এখানে হোটেলে রুম বুক করা ছিল হাজার দশেক তো বটেই, এখন সেখানে বুকিং রয়েছে খুব জোর হাজার খানেক।
অথচ ২২ এপ্রিলের আগে এখানে রমরমিয়ে চলছিল পর্যটকদের আনাগোনা। কিন্তু আচমকা ওই জঙ্গি হানা পর্যটন মরুশুমে কার্যত পেরেক ঠুকে দিয়ে গেল। অনন্তনাগ জেলার পহলগাঁওয়ে তো বটেই, এছাড়া আরও অন্তত পঞ্চাশটি পর্যটন কেন্দ্র সরকারি নির্দেশে বন্ধ। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধে আবহ তৈরি হয়েছে তাতে সাহস করে আর পর্যটকেরা এ মুখো হচ্ছেন না। বিদেশি পর্যটকেরাও তাঁদের দেশের সতর্কতা মেনে কাশ্মীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা ভীষণ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তাই এখন পর্যটন ব্যবসাকে জানে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছেন হোটেল স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অনন্তনাগ জেলার হোটেল অ্যাসোসিয়েশন, পনি অপারেটর এবং ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলিতভাবে এই লোকসানে চলা পর্যটন ব্যবসাকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম পর্যটকদের মধ্যে আস্থা জাগিয়ে তোলা।
হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বলা হয়েছে, এই জঙ্গি হামলা বিশেষ ভাবে উৎকন্ঠার কারণ হয়ে উঠেছে যেহেতু তাদের হত্যালীলা ধর্ম বেছে হয়েছিল। তাই অ-কাশ্মীরিদের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়াটাই প্রধান কর্তব্য বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, ভ্রমণার্থীদের কাছে কাশ্মীর যে নিরাপদ এটা না ফেরাতে পারলে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না। তাই পুরোদস্তুর পর্যটন মরশুমের কিছুটা ক্ষতি মেটাতে তাঁরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগের রুম ভাড়ায় ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। সব খাবারে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেস্তরাঁ মালিকরা। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে রোজই বিকেলে মোমবাতি মিছিল করা হচ্ছে। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, জঙ্গি হানায় নিহতদের ক্ষতিপূরণ তো সম্ভব নয়, সে কারণে আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এই চিত্র শুধু বিচ্ছিন্নভাবে অনন্তনাগ জেলায় নয়। গোটা কাশ্মীরেই কার্যত একই প্রক্রিয়ায় নেমেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ডাল লেকের ধারে দাঁড়ানো চাটওয়ালা থেকে কাশ্মীরের সব হোটেলেই এখন বিরাট ডিসকাউন্ট মিলছে। এমনকী লালচকের দোকান, রেস্তরাঁগুলিতেও একই ছবি। সংহতি প্রকাশের অঙ্গ হিসেবে বিশাল ছাড় ঘোষণা করে বাইরে প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরি শিকারায় ফল বিক্রেতারা পর্যটকদের জন্য বিনা পয়সায় ফ্রুট স্যালাড দেওয়ার অফার দিয়েছেন।
এই জঙ্গি হানার পর কাশ্মীরে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবার সাধারণ কাশ্মীরিরা রাস্তায় বেরিয়ে শান্তি মিছিল করে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী স্লোগান দিয়েছেন। একদিনের ব্যবসা বনধ পালন করেছেন। পিডিপির বিধায়ক ওয়াহিদ উর রহমান পারা বলেন, এই জঙ্গি হানা ধর্মীয় আক্রোশের অঙ্গ। তাই আমাদের কাছে পর্যটন ব্যবসাটা অগ্রাধিকার নয়, পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়াই প্রাথমিক দায়িত্ব।