
নিজস্ব প্রতিনিধি :
গ্রীষ্মের মরশুমে দেশীয় পর্যটকদের কেরালা ভারতজুড়ে প্রচারাভিযান শুরু করবে
স্কুলে কেরালার পর্যটনমন্ত্রী শ্রী পিএ মোহাম্মদ রিয়াস বলেন, “গ্রীষ্মের ছুটির মরশুম দ্রুত এগিয়ে আসছে, তাই আমরা স্কুলের গরমের ছুটি এবং পারিবারিক পর্যটনকে লক্ষ্য রেখে ভারতীয় দর্শনার্থীদের জন্য নতুন সম্ভার উন্মোচন করব।”
এ’বারের প্রচারে জোর দেওয়া হবে উত্তর কেরালা, বিশেষ করে ওয়ানাড, বেকাল, কান্নুর এবং কোঝিকোড়ের উপরে। পাশাপাশি উন্নত পরিকাঠামো-সহ কম পরিচিত গন্তব্যস্থলগুলিতেও মনোনিবেশ করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
শ্রী রিয়াসের মতে, “দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা কেরালার পর্যটনকে একটি গতিশীল উদ্যোগে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের সমগ্র ভারতব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচারের মূল লক্ষ্য হল, বিভিন্ন ধরণের দর্শনার্থীর জন্য সব ঋতুতেই উপভোগ্য পর্যটন গন্তব্য হিসেবে কেরালার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তোলা।”
কেরালা সরকারের পর্যটন সচিব শ্রী বিজু কে বলেন, “নতুন পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে হেলি-ট্যুরিজম এবং সমুদ্র বিমান উদ্যোগ, যা রাজ্যের গন্তব্যগুলিকে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত এবং সহজগম্য করে তুলবে।”
শ্রী বিজু আরও বলেন, “নতুন প্রকল্পগুলির পাশাপাশি, দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধ করতে রাজ্যের মূল সম্পদ যেমন সমুদ্র সৈকত, হিল স্টেশন, হাউসবোট এবং ব্যাকওয়াটার তো থাকছেই।”
কেরালার পর্যটন পরিচালক শ্রীমতি শিখা সুরেন্দ্রনের দাবি, “আমি জোর দিয়ে বলছি, কেরালা পর্যটনের ক্ষেত্রে শুধু তার পরম্পরাগত আকর্ষণগুলিই বজায় রাখে নি, বরং বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য এবং উদ্যোগের মাধ্যমে পর্যটনক্ষেত্রকে ক্রমাগত বিকশিত করে চলেছে। ফলে সমস্ত ঋতুর ক্ষেত্রেই কেরালা এক রোমাঞ্চকর পর্যটনস্থল হয়ে রাজ্যের খ্যাতি বৃদ্ধি করছে ও পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে।”
কেরালার পর্যটনে একটি বিশাল অংশই দেশীয় পর্যটকেরা। সেই অবদানের কথা মাথায় রেখে ও পর্যটনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে কাজে লাগাতে, বিশেষ করে স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় দেশব্যাপী অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য রাজ্য পর্যটন দফতর একটি সর্বভারতীয় প্রচার শুরু করেছে।
কেরালা সরকারের পর্যটন বিভাগের পরিচালক শ্রীমতি শিখা সুরেন্দ্রনের মতে, বিলাসিতা এবং অবসর যাপনের মিশ্রণে, কেরালা দ্রুত ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এবং মাইস (মিটিং, ইনসেনটিভ, কনফারেন্স এবং প্রদর্শনী) ইভেন্টের জন্য একটি পছন্দের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। রেকর্ড বলছে, দিনের পর দিন, আরও বেশি করে ভারতীয় এবং বিদেশি নাগরিক কেরালায় বেড়াতে আসছেন। দর্শনীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা এবং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার নিরবচ্ছিন্ন মেলবন্ধনের দৌলতে এই রাজ্য স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতার সন্ধানে থাকা ইভেন্ট পরিকল্পনাকারী, দম্পতি এবং কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের সমানভাবে আকর্ষণ করছে।
অতিমারী-পরবর্তী সময়ে, কেরালাকে অবশ্যগন্তব্য পর্যটন স্থান হিসেবে বহু আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ স্বীকৃতিটি শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল ভ্রমণ সংস্থা Booking.com থেকে এসেছে, যারা তাদের ত্রয়োদশ বার্ষিক পর্যটক মূল্যায়ন পুরষ্কারে ‘মোস্ট ওয়েলকামিং রিজিয়নস’-এর তালিকায় কেরালাকে দ্বিতীয় স্থান দিয়েছে।
একটি অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন গন্তব্য হিসেবে কেরালার অবস্থানকে আরও উন্নত করার জন্য, এই বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সার্ফিং, প্যারাগ্লাইডিং এবং মাউন্টেন সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে রাজ্য।
১৯ থেকে ২৩ মার্চ ইদুক্কির ভাগামনে আন্তর্জাতিক প্যারাগ্লাইডিং উৎসব এবং ২৮ থেকে ৩০ মার্চ ওয়ানাডের মানন্তওয়াডিতে মাউন্টেন টেরেইন বাইকিং চ্যাম্পিয়নশিপ (এমটিবি কেরালা ২০২৫) অনুষ্ঠিত হবে।
ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য হাউসবোট, ক্যারাভান স্টে, প্ল্যান্টেশন ভিজিট, জঙ্গল রিসোর্ট, হোমস্টে, আয়ুর্বেদ-ভিত্তিক সুস্থতা সমাধান, অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমস, সবুজে ঢাকা পাহাড়ে ট্রেকিং এবং গ্রামাঞ্চলে পায়ে হেঁটে ঘোরার মতো বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই রাজ্য সত্যিই অনন্য।
২০২২ সালে যেখানে কেরালায় দেশীয় পর্যটকদের আগমন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়ে অতিমারীর আগেকার সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল, সেখানেই ২০২৩ সালে তাদের আগমন রেকর্ড সংখ্যায় পৌঁছে যায়। ২০২৪ সালেও পর্যটকদের আগমনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) মোট ১,০৮,৫৭,১৮১ জন দেশীয় পর্যটক এখানে এসেছেন। চলমান শীতকালীন ছুটির মরশুমে বুকিংয়ের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা থেকে আশা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমনও এই বছর কোভিড-পূর্ব স্তরে পৌঁছে যাবে।
গ্রীষ্মের ছুটির মরশুমে দেশীয় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রত্যাশায় কেরালা পর্যটন বড় বড় বাণিজ্য মেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বৃহত্তর দর্শকদের সামনে নতুন পণ্যসম্ভার তুলে ধরার জন্য ভারতজুড়ে বি২বি রোড-শো আয়োজনের মাধ্যমে ভ্রমণ বাণিজ্য নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের বিস্তৃত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।