
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়: রাম মন্দিরের উদ্বোধনের আগে ফের আরও একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ শানালেন পুরীর গোবর্ধনমঠের শংকরাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। শনিবার গঙ্গাসাগরে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন পুরীর শংকরাচার্য। চলতি মাসের ২২ তারিখ অযোধ্যাতে রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলির দাবী শুধুমাত্র ২০২৪ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মন্দির উদ্বোধন। এমনকী এই উদ্বোধনের আমন্ত্রণ পেলেও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকারজুন খারগে, রাহুল গান্ধী-সোনিয়া গান্ধীও সেই আমন্ত্রন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তবে শুধুমাত্র বিরোধী দল গুলো নয়, উত্তরা উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষ্পীঠের শংকরাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ এবং পুরীর গোবর্ধন মঠের শংকরাচার্য নিশ চলানন্দ সরস্বতী এইটা একইভাবে এই রাম মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ পেলেও ২২ শে জানুয়ারি উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়েছেন যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরী হয়েছে। শনিবার গঙ্গাসাগরে এসে রাম মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়েও প্রধানমন্ত্রীকে বিধলেন শংকরাচার্য।
তাঁর বক্তব্য, ” রাম লালার নির্দিষ্ট থাকার জায়গা পাচ্ছেন, সেটা সব সময় চাই, কিন্তু তাতে রং না চড়ালে ভালো লাগতো।” ২২ শের মন্দির উদ্বোধন আদৌ হিন্দু সনাতন ধর্ম মেনে হচ্ছে না বলে দাবি করে পুরীর শংকরাচার্য বলেন,” যেটা হচ্ছে সেটা হোক শাস্ত্র মতে সনাতন ধর্মের রীতি মেনে, সনাতনী রীতি না মেনে মন্দির উদ্বোধন বা মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে ভূত-প্রেতের প্রভাব বাড়বে শুদ্ধমতে কিছুই হবে না তাই আমি ২২ তারিখ যাবো না। ” তার আরও সংযোজন ,”প্রধানমন্ত্রীর উচিত সনাতন ধর্মকে রক্ষা করা তার রীতিনীতি মেনে চলা,
সব জায়গায় দখলদারি দেখানো ঠিক নয়, ধর্মীয় রীতি, শাস্ত্র নিয়ম মেনে সব করা উচিত, সব ক্ষেত্রে ঢুকে পড়াটা উন্মাদনার সামিল। এবং সাংবিধানিক দিক থেকেও জঘন্য অপরাধ। আমাদের ও কিছু সীমাবাধ্যতা আছে আমরা ও যেমন তা এড়িয়ে যেতে পারি না, শাসকেরও সেটা মাথায় রাখা উচিত। শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধ পালন করাই প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য। কিন্তু সেই বিধি কে অতিক্রম করে নিজের নাম প্রচার করা নিজের ধ্বংসের পথ টেনে আনা।” এর পিছনে কি রাজনীতি আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে শংকরাচার্য আরও স্পষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন। বলেন,” সনাতন সংবিধান রক্ষা করা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব,তা উলঙ্ঘন করার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই। রামও সেই সংবিধানকে মান্যতা দিয়েই শাসক হয়েছিলেন। বৈদিক সংবিধানকে মান্যতা না দিয়ে নিজের প্রচারে ব্যস্ত থাকা টাও উন্মাদনার সমান।” কংগ্রেস সহ যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আমন্ত্রন পেয়েও ২২ তারিখ রাম মন্দির উদ্বোধনে যাচ্ছে না, ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ‘অ- হিন্দু’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এদিন তার বিরোধিতা করে শংকরাচার্য নিশচলানন্দ সরস্বতী বলেন,” তাহলে তো আমি সব থেকে বড় অ-হিন্দু অ-সনাতনী। এভাবে কাউকে অ-হিন্দু অ -সনাতনী বলা যায় নাকী?” ২২ জানুয়ারী অযোধ্যা না আসার কারণ হিসাবে তাঁর ব্যখ্যা,” প্রধানমন্ত্রী মূর্তি উদ্বোধন করবেন, গর্ভগৃহে যাবেন আর আমি উনার পাশে বসে হাততালি দেবো? আমার পদেরর গুরুত্ব আর মর্যাদা আমি জানি।” তবে যে ভাবে ২২ তারিখ রাম মন্দির উদ্বোধন হবে, তা যে অনেকটা রাজনৈতিক ‘গিমিক’ তা আরও একবার মনে করিয়ে পুরীর শংকরাচার্য বলেন,” সীমা মেনে সবার কাজ করা উচিত, সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ, দখলদারি বা দাদাগিরি করা উন্মাদদের কাজ সেটা করা ঠিক নয়।”