
কুশল চক্রবর্তী : সত্যিই অবাক হবার মত ঘটনা। মানে ঘটনাটা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হওয়া মুশকিল। যে সরকার আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে বিলগ্নিকরণ নিয়ে এত ব্যাস্ত, যে সরকার জাতীয় টেলিফোন সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগমকে সঠিক সহায়তা দিতে এত দিধাগ্রস্থ, তারাই কিনা ২৯ মার্চ এক অধ্যাদেশ বলে আদিত্য বিড়লা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ভিয়াই টেলিকম সংস্থাকে বাঁচাতে ৩৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা দিয়ে দিল। যে ভিয়াই দিনের পর দিন ভারত সরকারের প্রাপ্য টাকা দিতে অপরাগ হয়েছে, তাকেই সরকার ঝুলি উপুড় করে সহায়তা করল। শুধু তাই নয় ভিয়াই এর কর্তৃত্বে থাকা আদিত্য বিড়লা গ্রুপের অংশিদারি কমে গেলেও তাদের কর্তৃত্ব এতটুকুও কমল না। অন্য দিকে এই সংস্থার ৪৯ শতাংশ শেয়ার হাতে নিয়েও ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা বাড়ল না। সরকার দেখাতে চাইল, এই ভাবে ভিয়াইকে সহায়তা না করলে ভারতি এয়ার টেল আর জিও টেলিকম বাজার নিয়ন্ত্রণ করত এবং জনগণের উপর চাপ আসত টেলিকম ব্যাবহারের খরচ বাড়ার বাপরে। অন্য দিকে ভিয়াই যদি সরকারের টাকা শোধ না করতে পেরে কোম্পানি সঙ্কোচনের বা বন্ধ করার দিকে যেত তাবে হয়ত চাকরি হারাত আনেক লোক। শুধু তাই নয় আগামী দিনে যখন ফাইভ-জি স্পেকট্রাম নিলাম হবে তখন অর্থনৈতিকভাবে আনেক সুস্থ এই ভিআই নিলামে অংশ নিয়ে সরকারের
অধিক আয়ের বাবস্থা করবে। এমন কি তারা নানা ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়ে, তা শোধ দিতে না পেরে, যে অসুবিধায় পড়ে ছিল, তার থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে।
কিন্তু অনেক মানুষ এই সহজ ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারছে না। ২০২৫ সালের বাজেটের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এই বাজেটে বি এস এন এল, ভারত সরকারের টেলিকম সংস্থাকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৩৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা যা কিনা গতবারের প্রদেয় সহায়তা ৮২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা থেকে ৫৯ শতাংশ কম। ধরা যাক, ভারত সরকার যদি ভিয়াই এর কাছ থেকে এই ন্যায্য পাওনা বুঝে নিয়ে দেশের অন্য কোন উন্নয়নের কাজে লাগাত বা বি এস এন এলের উন্নয়নের কাজে লাগাত তবে কি আনেক বেশি ভারাতবাসী উপকৃত হত না ? ভারত সরকার বিএসএনএলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যেমন নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল সেরকম ভাবে ভিয়াই কে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাদের কর্তৃপক্ষকে কি কিছু বলতে পারত না ? তবে হয়ত আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কটা তেমন থাকত কি ? ভারত সরকারের এই টাকা দেবার ফলে কি অবস্থাটা কি দাঁড়াল দেখা যাক, সরকারের শেয়ার ৪৯%, প্রমোটারের শেয়ার নেমে এল ৩৮% থেকে ২৬%-এ, কুমার মঙ্গলম বিড়লার শেয়ার নেমে এল ১০% থেকে ৯.৪%-এ। শুধু তাই নয় ভিয়াই এবার ভারত সরকারের প্রাপ্য টাকাটা তাদের কোম্পানির ৩ হাজার ৬৯৫ কোটি ১০ টাকার শেয়ার ভারত সরকারের নামে নথিভুক্ত করার বন্দোবস্ত করবে, সেবির নিয়ম মেনে। বাজারে কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরে ভিয়াই এর শেয়ার ৬ টাকা বা ৭ টাকা দামের মধ্যে কেনা বেচা হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকের কাছে এই ভিয়াইয়ের দেনা সবমিলিয়ে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা, তাকে সাহায্য করার জন্য সরকার উদার হস্তে এগিয়ে এল অথচ এই ভারতবর্ষে সামান্য ৫০ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধে অপারক গরীব চাষিকে বা শ্রমিককে চরম হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, তখন কিন্তু এমন দয়ালু ব্যাবহার দেখা যাচ্ছে না। এরপরও কি বলা যাবে না শিল্পপতিদের সাথে “সুসম্পর্ক” রাখাটাই সরকারের “সঠিক” পথ।