
সুমিত চৌধুরী: সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার লোপ করে মোদি শহর সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা সঠিক। যারা বিশ্বাস আইনঞ্জ অথবা সংবিধান বিশারদ তারা অনেকেই দেখলাম চুপ করে আছেন। যারা চুপ করে আছেন তাদের মধ্যে দু ধরনের লোক আছেন। একদল সত্যি সত্যি বিশদে রায়টা না বুঝে কিছু বলতে চাইছেন না। অন্য একদল আছেন যারা সুপ্রিম কোর্ট এবং মোদিশাহ জুটির ভয়ে চুপ করে আছেন। আসলে জানেন এটা ন্যায় বিচার হলো না।
২০১৯ সালে যেদিন আচমকাই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রপতি রোদ্ধাদে এসে কাশ্মীরের জন্য বরাদ্দ ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া হচ্ছে সেদিন সদ্য প্রয়াত সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায় কে ফোন করেছিলাম। আমার প্রাক্তন স্যার এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ অমল মুখোপাধ্যায় সেদিন স্পষ্ট ভাবে বলেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংবিধান বিরোধী।
কিন্তু আজকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন ৫ জনের সাংবিধানিক বেঞ্চ যারা রায় দিয়েছে ,তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে এই রায় সংবিধান মোতাবেক বৈধ। এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। এই রায়ের
বিভিন্ন দিক আছে। কাশ্মীর প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনায় আমি যাচ্ছি না। সেটা অন্য লেখার বিষয় হতে পারে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায় রাজ্যের অধিকারের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং ভারতবর্ষের বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে অনভিপ্রেত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছে।
সবথেকে বিপদজনক হলো এখানে সরাসরি বলে দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছে করলে রাজ্য সরকারের যেকোন অংশ কেটে নিয়ে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে দিতে পারে।
এর মধ্যে বেআইনি কিছু নেই।
জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের মতামতের প্রতিফলনের ক্ষেত্রে রাজ্যের নির্বাচিত বিধানসভার বদলে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত কেউ এখানে সুস্পষ্টভাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
এই রায় রাজ্য কেন্দ্র সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আগামী দিনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক বেঞ্চের কোন নির্দেশ বা পর্যবেক্ষণ আইনের বিচারে প্রায় সাক্রোস্যান্ট হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা তাদের রায় বিভিন্ন ধারা উপধারার সূক্ষ বিচার করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত কেন টেকনিক্যালি আইনের বিচারে সঠিক তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু একটা জিনিস আমি মনে করিয়ে দিতে চাই সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে, সংবিধানের কোন ধারা যদি কোন জনসমষ্টির অধিকারের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে,
যাথার্থ বিচারের সময় শুধুমাত্র আইনের টেকনিক্যাল দিক ছাড়াও, তার অন্তর্বস্তুর দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
এখানে কাশ্মীরী জনতার কাছে যেটা সাধারণ পারসেপশন সেটা হলো কিছু নির্দিষ্ট বিশেষ অধিকারের ভিত্তিতে আমরা ভারতবর্ষে সামিল হতে রাজি হয়েছিলাম।
সাংবিধানিকভাবে তার গ্যারান্টি ছিল ৩৭০ধারা। আরো মনে রাখতে হবে,শুধুমাত্র কাশ্মীর নয় উত্তর পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যের বিশেষ অধিকার নির্দিষ্ট করবার জন্য একাধিক ধারা রয়েছে। তথাকথিত মূল স্রোতের বাইরে যে সমস্ত জনসমষ্টি রয়েছে তাদের স্বেচ্ছায় সম্মিলনের গ্যারান্টি ছিল আমাদের সংবিধানের এই সমস্ত বিশেষ অধিকারের ধারা গুলি।
সুতরাং ৩৭০ ধারা বিলোপ টেকনিক্যালি ঠিক হলেও সামগ্রিকভাবে স্বেচ্ছা সম্মেলনের যে ধারণায় ভিত্তিতে ভারতের যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠেছে, সেই ধারণার পূর্বশর্ত ,ভারতবর্ষে কর্তৃত্বকারী কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস, তা এই ধরনের তৎপরতার ফলে বিরাট ভাবে ধাক্কা খাবে।
সোজা বাংলায় বললে কাশ্মীরি জনতার কাছে এটা কথার খেলাপ বলে মনে হবে। যে আশ্বাস ভারত রাষ্ট্র কাশ্মীরের তৎকালীন মহারাজা হরিসিংকে দিয়েছিল। মে আশ্বাস কাশ্মীরের তৎকালীন জননেতা শেখ আব্দুল্লাহ বিশ্বাস করেছিলেন।