
জিতেন নন্দী : ২০১২ সাল থেকে বারবার সংসদ ও রাজ্যসভায় Aadhaar অর্থাৎ ভুয়ো আধার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সরকারপক্ষ প্রশ্নটা এড়িয়ে গেছে। কিন্তু গত ৫ই এপ্রিল যখন সাংসদ এবং আইনজীবী আদুর প্রকাশ মৃত ব্যক্তিদের আধার নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলেন, তখন সরকারপক্ষে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন টেকনোলজি বিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রীকে জবাব দিতে হল : ১। আধার-কর্তৃপক্ষের সিস্টেমের মধ্যে এই ব্যবস্থা নেই; ২। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত যে ১৩৬ কোটি আধার-গ্রাহক হয়েছে, তার মধ্যে ১৩০.২ কোটি জীবিত বাসিন্দার আধার। নয়টি রাজ্যে জনসংখ্যার চেয়ে আধার-গ্রাহকের সংখ্যা বেশি।
এর অর্থ কী? হিসেব মতো প্রায় ছয় কোটি আধার-গ্রাহকের কোনো অস্তিত্ব নেই। এগুলো ভুয়ো আধার। এই আধার নাম্বারের সঙ্গে যুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, মোবাইল, পাসপোর্ট ইত্যাদি যা ব্যবহার করা হবে এবং হচ্ছে তা ভুয়ো।
এছাড়াও রয়েছে আরও বিচিত্র ভুয়ো আধার। এর আগে আধার-কর্তৃপক্ষ UIDAI–এর কার্যকারিতা নিয়ে CAG রিপোর্টে ‘জেনারেশন অফ মাল্টিপল আধার’ অংশে রয়েছে যে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৪.৭৫ লক্ষ ডুপ্লিকেট আধার UIDAI বাতিল করেছে। ২০ জুলাই ২০২২ লোকসভায় ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন টেকনলজি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, আধার কর্তৃপক্ষ ৫,৯৮,৯৯৯ ডুপ্লিকেট আধার বাতিল করেছে।
প্রসঙ্গত, বহু প্রতারক প্রযুক্তির সাহায্যে জাল আধার তৈরি করে নেয়, বলে অভিযোগ। ২০১৭ সালে আমেদাবাদের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়স্ক নীলেশ মিস্ত্রি নিজের কারিগরি বুদ্ধি প্রয়োগ করে ১০০টা জাল আধার কার্ড তৈরি করেছিলেন।তিনি পুলিশের কাছে ধরা পড়েছিলেন। আধার জাল করার সমস্ত প্রতারকদের কিন্তু আধার কর্তৃপক্ষ এখনও ধরতে পারেনি, বোনের দাবি করা হয়েছে।তাই নকল আধারের মোট সংখ্যাটা কিন্তু এর দশগুণ অথবা বিশ গুণও হতে পারে!
আধার-এর সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে এত ভুয়ো আধার তৈরি হল কী করে? ২০১০ সালের জুলাই মাসে UIDAI সংসদ ও জনপরিসরে আলোচনা ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে ১৫টি বেসরকারি এজেন্সিকে আধারের তালিকাভুক্তির প্রশিক্ষণের জন্য নিযুক্ত করে এবং তালিকাভুক্তির কাজের জন্য ২২০টা বেসরকারি এজেন্সির নাম প্রকাশ করে। ২০১০ সালেই সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কৃষ্ণা আয়ার Ernst & Young এবং Accenture–এর মতো কর্পোরেট বহুজাতিক কোম্পানিকে আধার-এর কাজে যুক্ত করার বিপদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আধার ঐচ্ছিক হওয়া সত্ত্বেও দ্রুত দেশের সমস্ত মানুষকে আধার-ভুক্ত করার জন্য আগ্রাসি ভঙ্গিতে এগিয়েছে আধার-কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া আধার কার্ডেও বহু ভুল থাকে, আমরা তা সংশোধনের চেষ্টা করি
। ২৭ জুলাই ২০২২ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে আধারের বায়োমেট্রিক তথ্যের ১৮%-এর বেশি ভুলের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়া ডেমোগ্রাফিক তথ্যের ভুল তো আছে, বলে অভিযোগ।
মৃত ব্যক্তিদের আধার নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা নেই আধার-সিস্টেমে। অথচ আধার-কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে দিয়েছে আধার সবচেয়ে বিশ্বস্ত পরিচয়-মাধ্যম।
খোদ আধার নাম্বারই যখন অথেনটিক বা সাচ্চা কিনা প্রমাণসাপেক্ষ, প্রশ্ন উঠেছে, আধার দিয়ে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কিংবা অন্য কিছুই অথেনটিক বা সাচ্চা কীভাবে প্রমাণ হতে পারে? এ দেশের বিপদ, দশের বিপদ। অথচ সরকার এখন ও নিরুত্তর।