
ওঙ্কার ডেস্ক : ক্রমবর্ধমান গ্লোবাল ওয়ার্মিং। উষ্ণায়ন যেন থামছেই না। জল্পনা, গবেষণা, উদ্বেগ—সবই চলছে পুরোদমে। তবুও পৃথিবীর উত্তাপ কমার নাম নেই। বরং বছর ঘুরলেই রেকর্ড গড়ছে গরমের তীব্রতা। সেই আবহেই এক অভিনব সিদ্ধান্তে মেতেছে ব্রিটেন। সূর্যকে নিভিয়ে নয়, তার আলো কমিয়ে পৃথিবী ঠান্ডা করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সরকারের অনুমোদনও মিলেছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসাবে দূষণ এবং কার্বন নির্গমনকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই প্রেক্ষাপটেই নতুন সম্ভাবনার খোঁজ পেয়েছেন তারা। দেখা গিয়েছে, সমুদ্রে চলা জাহাজ থেকে যে সালফার নির্গত হয়, তা বায়ুমণ্ডলে মিশে মেঘকে আরও প্রতিফলক করে তোলে। ফলে সূর্যালোক ফিরে যায়, যার জেরে সেই অঞ্চল কিছুটা ঠান্ডা থাকে। এই পর্যবেক্ষণই এবার আশার আলো দেখাচ্ছে ব্রিটেনকে।
সূর্যের তেজ কমাতে তারা বেছে নিচ্ছে Geoengineering-এর পথ। প্রাথমিকভাবে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৬৭ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি গবেষণা সংস্থা Advanced Research and Invention Agency (ARIA)-কে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বায়ুমণ্ডলে প্রতিফলক কণা যুক্ত মেঘ ছড়ানো হবে। এমনকী, সমুদ্রের জলকে ছিটিয়ে মেঘকে আরও উজ্জ্বল করাও হতে পারে কৌশলের অঙ্গ।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। বিজ্ঞানীদের দাবি, সূর্যালোক যদি বায়ুমণ্ডলেই প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়, তাহলে পৃথিবীর মাটিতে তার তাপ পড়বে না। ফলে গরমও কিছুটা কমবে। আর এতে কার্বন নির্গমন কমাতে কিছুটা সময়ও হাতে পাওয়া যাবে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক পিটার আরভিন বলছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের মূল সমস্যা এতে দূর হবে না ঠিকই। তবে সমস্যার সমাধানে সময় পাওয়া যাবে।”
এই একই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। তবে এখানেই উঠছে প্রশ্ন। কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঘটাতে গিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার নজির রয়েছে। দুবাইয়ের সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা।
এখানেই শেষ নয়। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের বায়ুমণ্ডল বিজ্ঞানী সারা ডোহার্টির মতে, “যেমন অ্যাসপিরিন খেয়ে ক্যান্সার সারানো যায় না, তেমনই শুধুমাত্র মেঘের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদকে ঠেকানো অসম্ভব।” বরং, প্রকৃতিতে এই ধরনের হস্তক্ষেপের ফল মারাত্মক হতে পারে বলেই আশঙ্কা অনেক বিশেষজ্ঞের।
তবুও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে বিজ্ঞানীদের একাংশ। আপাতত দৃষ্টি পরীক্ষার ফলাফলের দিকে। পৃথিবী কি তবে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে? সময়ই দেবে উত্তর।