
বিপ্লব দাশ : চ্যাঙদোলা বনাম ঠুসে দেওয়া, রাজ্য রাজনীতির এই নব্য সংস্কৃতি পূর্বাভাস দিচ্ছে ২০২৬-এর ভোটের সম্ভাব্য আবহ। ১৯৪৬-এর পর কখনও সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে রাজনৈতিক এজেন্ডা হয়ে উঠতে দেখেনি এ রাজ্যের মানুষ। এবার যেন সেই মেঘ ঘনাতে শুরু করেছে। সঙ্ঘ শিবির তো বটেই, পালটা হুঁশিয়ারিতে নেমেছেন শাসকদলের নেতাও। দীর্ঘদিন ধরে গেরুয়া পুটলি থেকে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িকতার বীজ যে বাংলার মাটিতেও অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে তার টের পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক ঘটনা যে এই বিষবীজের শিকড় গজাতে খানিক রসদ জুগিয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। কারণ, বিভক্ত হলেও বাঙালি সংস্কৃতির নাড়ির টান তো রয়েছেই। তার উপর এখনকার রাজীনিতিতে অতিমাত্রায় প্রাধান্য পাচ্ছে নেগেটিভ ইস্যু। উন্নয়নের পথ রুদ্ধ হলে যা হয়।
সমাজ ও শিক্ষার পথ ধরে মুসলিমদের কারও কারও মধ্যে সম্প্রদায়িক মনোভাব বাসা বাঁধে শৈশব থেকেই। যা সামান্য উস্কানিতে প্রকট হয়ে উঠতে দেখা যায়। ফলে যেসব বিবৃতি ইতিমধ্যে কানে আসছে তা মোটেই সুখকর নয়। অন্যদিকে গত তিনদশক ধরে বিজেপির জমিতে হিন্দু কট্টরপন্থী গোষ্ঠী ক্রমেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতিতে। ভারতের স্বাধীনতার জ্বালা তারা আজও উপলব্ধি করতে পারেনি। তাই হিন্দু হিন্দু করে এক অবাস্তব রাষ্ট্রের মোহ ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারা বুঝতে চাইছে না, ধর্ম কোনো রাষ্ট্রের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাহলে তো বিশ্বের ইসলামিক রাষ্ট্রগুলি মানুষের সমাজ চেতনার আদর্শ হয়ে উঠতো। কিন্তু সেই অর্থে কোনো আদর্শ মুসলিম রাষ্ট্রের নজির কী আমরা পেয়েছি ! খনিজ সম্পদের দৌলতে অনেক রাষ্ট্র ধনী হয়েছে বটে, কিন্ত গণতন্ত্র কোথায় ? ইরাক, ইরান, সিরিয়া, লিবিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশে ঘটে চলেছে রক্তক্ষয়ী শাসন ব্যবস্থা। মৃত্যু হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের। এটা কোনো মানবিক বা আধুনিক জনজীবনের দৃষ্টান্ত হতে পারে না।
তেরো শতকে মুসলমানদের তথাকথিত মুক্তির দুত ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বলেছিলেন ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অত্যাচার ও দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পেতে গেলে হিন্দুরা যেন মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। ৫৫১ বছর মুসলিমরা বাংলা শাসন করেছিল, তাহলে স্বাধীনতার পর মুসলিমরা এত গরিব থেকে গেল কেন ? ঠিক একই ভাবে হিন্দুরা কেন সনাতনী যুগে ফিরে গেল না ? তার কারণ নিশ্চয়ই গণতন্ত্র। এবং তা অবশ্যই ভারতের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের আদৰ্শ। তাই ভারতের উন্নতির স্তম্ভই হল ধর্ম নিরপেক্ষতা। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেমন সংসদীয় গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়, তেমনি সুরক্ষিত রাখা উচিত তার গনতান্ত্রিক রক্ষাকবচ। প্রতিটি নাগরিকের উপর এই দায়িত্ব বর্তায়।