
বিপ্লব দাশ : বাংলা ভাষাদিবসের জন্মভূমিতে কী দানা বাঁধছে ‘৭১-র পূর্ব পরিস্থিতি ? মাতৃভূমির ভাষার জন্য বিশ্বের বুকে রক্ত ও প্রাণদানের যে অনন্য ইতিহাস রচিত হয়েছিল তা কী মর্যাদা হারাচ্ছে ? বাংলাদেশে রাষ্ট্রিয় পালাবদলের পর বিশ্ব-বাঙালির কাছে এখন এটাই বড় প্রশ্ন ! চুপিসারে সে দেশে এই মহান দিবসে নীরব রইল “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর যে লেখা বাংলাদেশের জাতি জাগরণের মন্ত্র হয়ে উঠেছিল, ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্তিতে তা আর শোনা গেল না সে দেশের রাষ্ট্রীয় মাধ্যমগুলিতে। ১৯৯৯ সালের ১৭ আগস্ট এইদিনটি মাতৃভাষা দিবস নামে স্বীকৃতি পায় রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে। বিশ্বের ভাষা আন্দলনের ইতিহাসে যা গর্বিত করে আপামর বাঙালিকে। অথচ সেই গর্বের জন্মভূমিতে প্রায় অগৌরবের হতে চলেছে ভাষা আন্দোলনের ত্যাগ ও মহিমা। সারা বিশ্বে ৩০ কোটির উপর বাংলা ভাষাভাষী মানুষ, প্রায় প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে আছে এর বিস্তার, গ্রহণযোগ্যতা, মাধুর্য এবং সম্মান। তবু বাংলা ভাষাকে আজ বঞ্চিত হতে হচ্ছে বাংলায়।
একটি জাতির ঐতিহ্যের ধারক তার ভাষা। তাই ঐতিহ্য যদি ধূলায় মেশে ভাষার চোখে তো বালি পড়বেই। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় তার জাত-মানসিকতা। নিজের ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অন্যের ভাষাকে সম্মান জানাতে হয়। পারস্পরিক সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে তার বিকাশ। বাঙালিদের মধ্যে তার অভাব চিরদিনের। অন্যের ভাষাকে খাটো করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছে নিজেরাই। চলছে মান্য বাংলার চাদর চড়িয়ে আঞ্চলিক বাংলাকে হেয়ো করার অহমিকাও। যা প্রকৃত অর্থে বাংলার ভাষা সম্পদকে রুদ্ধ করচ্ছে। এর থেকে বেরোতে না পারলে সামগ্রিক ভাবে বাংলা ভাষাকে সময়ের দৌড়ে বাঁধা যাবে না।