
বিপ্লব দাশ : ডাবের শরবত থেকে কোল্ড ড্রিঙ্ক, অটোগ্রাফ থেকে সেলফি, মুদ্রিত বই থেকে ডিজাটাল এডিশন…… তবু ১লা বৈশাখ ১লা বৈশাখেই। রঙ বদলালেও সমাগম বেড়েছে কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, ঠনঠনিয়ায়। বাঙালিয়ানার যা অনটন তা যেন ঘুঁচে যায় নববর্ষ এলে। তাই ফি বছর ১লা বৈশাখ আসে ১লা বৈশাখেই। এখনও গ্রামাঞ্চলে ১লা বৈশাখের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে গাজন কিংবা চড়কমেলা। আসলে নববর্ষের এই উদযাপন যেন বাঙালির নতুন ভাবে বেঁচে থাকার অঙ্গীকার হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে তা এভাবে চলে আসতে আসতে তার চরিত্র এখন লোকায়ত। বাঙ্গালির প্রাণের সঙ্গে মিশে গেছে ১লা বৈশাখ। হালখাতা আগেই ছিল, পরে যুক্ত হয় মুদ্রনশিল্প, ক্রমেই তা বইপাড়ার উৎসব হয়ে যায়- যা এখনও প্রকাশক ও লেখকের বাৎসরিক উদযাপনও। নতুন বই, রয়্যাল্টি এসব তো ছিল, যুগ বদলালেও এখনও তার বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি শুধু যুক্ত হয়েছে তার অতিরিক্ত ক্ষেত্র ও আঙ্গিক। বইমেলার প্রচলনের পর প্রকাশকদের বানিজ্যিক চরিত্র বদলালেও, ১লা বৈশাখ ১লা বৈশাখেই আছে।
১লা বৈশাখ বাঙালির কাছে নববর্ষ হিসেবে একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হলেও, এর লক্ষ্য কিন্তু সাংস্কৃতিক ছিল না। রাজস্ব আদায়ের একটা বার্ষিক তারিখ হিসেবে এর শুরু। ষোড়শ শতাব্দির শেষের দিকে যার প্রচলন ঘটান সম্রাট আকবর। বাংলার কৃষকদের খাজনা মেটানোর সুবিধার্থে হিজরি সনকে ভিত্তি করে বাংলা সনের প্রচলন ঘটে। এর আগে হিন্দু সৌরপঞ্জিকার আমলেও নববর্ষ বা ১লা বৈশাখে উৎসব পালন করা হতো। তবে সেই উৎসব ছিল ঋতুধর্মী। মূলত তখনকার কৃষি-ভিত্তিক সমাজেই প্রচলিত ছিল এই উৎসবের রীতি। বঙ্গ, নেপাল, ত্রিপুরা, আসাম, উড়িষ্যা, কেরালা, মনিপুর, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ুর অধিবাসীরাও পালন করত এই উৎসব। পালন করত তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবেই। মূলত সুষ্ঠুভাবে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে নতুন পঞ্জিকা আনেন সম্রাট আকবর যা বাংলা সন হিসেবে পরিচিত। সেই খাজনা আদায়ের দিন আর নেই, তবু রয়ে গেছে বাঙালির লোকায়ত উৎসব। সেটাই পরবর্তীকালে বাংলার নতুন বছরের প্রথম পার্বন। যা এদিন ধুমধামের সঙ্গে পালিত হচ্ছে সারা বাংলায়। বসে নেই আমরাও। নানা গুণীজনের সমাগমে দিনভর ওঙ্কার বাংলায় ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে নানান প্রতিবেদন। সঙ্গে থাকুন। সবার প্রতি রইল “ওঙ্কার বাংলা” তরফ থেকে আন্তরিক শুভ কামনা।