
বিপ্লব দাশ : বিগত চার বছরে মাটির চরিত্র বদলেছে অনেকটাই। তাই উপর উপর চোখ ফেলে মাটির সংজ্ঞা নির্ধারণ করলে তা সময়োপযোগী হবে না। এর যথার্থতা নির্ভর করছে এই সময়ের সামাজিক প্রকৃতি এবং তাকে ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ। অর্থাৎ এই মাটিতে ফসল কেমন হবে তা নির্ভর করছে কার কেমন সার তার উপর। তাই ২৬-এর বাংলা যেমন এক নয়, তেমনি তার সমীকরণটাও বদলে গিয়েছে।
যেমন একটা ছোট্টো পরিসংখ্যান, গত এক বছরে এই রাজ্যে রাষ্ট্রিয় সয়ংসেবক সংঘ অর্থাৎ আরএসএস-এর শাখা বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার। একটি সেকুলার সচেতন রাজ্যে হিন্দুবাদী সংগঠনের এই বাড়বাড়ন্ত কি গাছে ফললো, এমনটা নয়। ফলে সামাজিক বৈষম্যের বীজ যে অঙ্কুরিত হচ্ছে তার একটা আভাস মিলছে। এখানেই উৎসাহিত হচ্ছে গেরুয়া শিবির। তাই তারা যে পাটিগণিত নিয়ে হিসেব করছে তাতে টার্গেট অতিরিক্ত ৩ শতাংশ ভোট। বাংলার মাটি এখন এই তিন শতাংশ ভোটের ডেফিসিটে রয়েছে। এর বাড়া বা কমার উপর দাঁড়িয়ে আছে ২৬-এর ভোট ফলাফল।
তৃণমূল, বিজেপি উভয়েরই বিলক্ষণ জানা এই হিসেব। আর তাই বছরখানেক আগেই শুরু হয়ে গেছে ভোটের শান দেওয়ার কাজ। “চ্যাংদোলা”-র উৎপত্তি ঠিক এখান থেকেই। কারণ বিজেপি চাইছে মেরুকরণ আর তৃণমূলের চেষ্টা সংখ্যালঘু ভোটের সুনিশ্চিতকরণ। তৃণমূলনেত্রীর ফুরফুরা সফরের পিছনে এই অঙ্ক ছাড় আর কী ! শুধু তাই নয়, এই সম্প্রদায়ে নতুন মুখ তুলে আনার প্রচেষ্টাও কাজ করছে। একসময় ফুরফুরা বলতে পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির দাপটকেই তুল্যমান ধরা হত। কিন্তু তাঁর সেই প্রতাপ এখন আর নেই। উঠে আসছে এই প্রজন্মের পিরজাদারা, নওশাদদের মতো তরুণ মুখ যাঁদের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক জোস রয়েছে। তাই মমতার পাশে এখন দেখা যাচ্ছে কাশেম সিদ্দিকিকে।
কেউ কেউ বলছেন, মমতার ফুরফুরা সফর এক ঢিলে দুই পাখি মারারই কৌশল। এই কৌশলটাই হল শুধু সংখ্যালঘুদের পাশে রাখা নয়, তাদের নতুন প্রজন্মকে তুলে ধরে আগামীদিনে দলের সুরক্ষাটি সুনিশ্চিত করে নেওয়া। তাই বাম জমানার পর সংখ্যালঘুদের কাছে টানার কাজে মমতা ঢেকুর তুলতে রাজি নন। হিসেবের উলটো পৃষ্ঠায় শুভেন্দুদের কলম চলছে তাদের মতোই। বাম-কংগ্রেসের দিকে এখনও যেটুকু হিন্দু ভোট রয়েছে তার পুরোটাই যেন বিজেপির দিকে টানা যায়। ফলে ২৬-এর ভোটকে ২১-এর সঙ্গে মেলালে চলবে না। এর আস্তরণে রঙের আঁচড় অনেক চড়া।