
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়:
সন্দেশখালি- এই নামটি জানেন না, আপাতত এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে খবরের কাগজের পাতা জুড়ে এখন শুধুই সন্দেশখালি। একদিকে অধরা শেখ শাজাহান অপরদিকে শাজাহানের ডানহাত বলে পরিচিত শিবু হাজরা আর উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে স্থানীয় মহিলাদের উপর নারকীয় অত্যাচারের অভিযোগ। এককথায় কার্যত অবরুদ্ধ দ্বীপ এই সন্দেশখালি। রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মতে, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে কার্যত এই সন্দেশখালি নিয়ে চূড়ান্ত চাপে রাজ্যের শাসক দল। যতো দিন যাচ্ছে বলা যেতেই পারে আরও চাপ বাড়ছে শাসকের। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিশেষ করে এই ইস্যুতে বিজেপি যে ভাবে চাপ তৈরি করছে তাতে রীতিমত টালমাটাল অবস্থা প্রশাসনের। যথেষ্ট বিপাকে শাসক দলও। তাহলে উপায়? রাজনৈতিক মহলের মতে , ঠিক এই মুহূর্তে আধার ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে মুখ্যমন্ত্রীর সরব হওয়া, বা আধার নিয়ে বিজেপি কে কার্যত তুলোধনা করা, এর পিছনে অনেকটাই ‘ সন্দেশখালি এফেক্ট’। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিষেক দে বিশ্বাস এর বক্তব্য,” একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, এই মুহূর্তে মিডিয়ার ভূমিকা মারাত্মক l সন্দেশ খালি নিয়ে আমরা যেটুকু জেনেছি বা জানছি পুরোটাই মিডিয়ার মাধ্যমে।
আর একথা ঠিক, টিভি আর খবরের কাগজ জুড়ে এখন শুধু সন্দেশখালি সেখানে দাঁড়িয়ে আধারের মতো ইস্যু নিয়ে যদি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেন সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই তার একটা বড় নিউজ ভ্যালু আছে। আর সেটাই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।” দিন যতো যাচ্ছে ততই হাতের বাইরে যাচ্ছে সন্দেশখালি। আর সেই তার সবটাই সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের হাত ধরে। অভিষেক এর ব্যাখ্যা, ” এই জায়গাটাই আটকাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। দেখুন ২৪ এর নির্বাচন লোকসভার নির্বাচন। বিধানসভা নয়, খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ভোটে সন্দেশখালি ইস্যু থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সমস্যা, সিএএ, এনআরসি নিয়ে এই মুহূর্তে যথেষ্ট আতঙ্কিত রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ।
তাই সেখানে দাঁড়িয়ে আধার ইস্যু নিয়ে খুব সহজে সেই মানুষ গুলোর পাশে থাকার বার্তা দেওয়া যাবে আবার কেন্দ্র যে ওই বড় অংশের মানুষের কাছে বিপদের কারণ সেটাও প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ।” ইতিমধ্যেই আধার-এর পাল্টা রাজ্য নতুন কার্ড চালু করার কথা ঘোষনা করেছে, এমনকী আলাদা portal ও চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী সেই কার্ড থাকলে রাজ্য সরকারের দেওয়া সমস্ত সুযোগও দেবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি। এমনকী আধার না থাকলেও। রাজনৈতিক মহলের মতে, আধার কার্ড বাতিল হোক বা না হোক, আধার নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে একদিকে যেমন কিছুটা আতঙ্ক বজায় রাখা গেল, পাশাপাশি কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ‘বড় বিপদ’ থেকে রাজ্যের মানুষকে বাঁচিয়ে দেওয়ার বার্তা দিলেন রাজ্যবাসীর’ ‘পাহারাদার’ বলে দাবি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।