
সন্তোষ মন্ডল, দুর্গাপুর : বেসরকারি কারখানায় নিয়োগে বেনিয়ম, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও চাকরি না জোটায় দলের ঝান্ডা হাতে তৃণমূল শ্রমিক নেতার বাড়ি ঘেরাও করল খোদ তৃণমূল কর্মীদের একাংশের। দলের শ্রমিক নেতার নামে শ্লোগান উঠল “চোর চোর”। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চলে। বুধবার থেকে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার এক বেসরকারি কারখানার গেট সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
চাকরির দাবিতে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙা শিল্পতালুকের বেসরকারি এক কারখানার গেটে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের ধারাবাহিক আন্দোলন চলে আসছে। কারখানার গেট সংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সমস্যার শুরু দিন দশেক আগে। স্থানীয়রা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না, অথচ সগড়ভাঙা শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি কারখানায় দিব্যি বহিরাগতরা কাজ করছে টাকা দিয়ে । প্রতিবাদে সগড়ভাঙার স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ দলের ঝান্ডা হাতে নিয়ে ওই বেসরকারি কারখানার সামনে আন্দোলনে বসেছিল। কারখানার গেটের সামনে দলের ঝান্ডা লাগিয়ে টেন্ট করে রীতিমতো রাত পাহারা দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের একাংশ এই বহিরাগত শ্রমিকদের আটকাচ্ছিল।
তাঁদের দাবি, আগে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে সেটা না করে বহিরাগতদের টাকার বিনিময়ে রাতের অন্ধকারে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে কারখানার ভেতর। সদ্য এই বেসরকারি কারখানায় তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নতুন কমিটি তৈরী হয়েছে, যার সভাপতি রাজ্য তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শেখ রমজান এই কারখানার তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের জয়েন্ট সেক্রেটারি। স্থানীয়দের বঞ্চিত করে কেন টাকা দিয়ে বহিরাগতদের নিয়োগ করা হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ দিন দশেক ধরে সগড়ভাঙা শিল্পতালুকের বেসরকারী এই কারখানার গেটে টেন্ট করে বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন, বের করে দিচ্ছিলেন বহিরাগত শ্রমিকদের।মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কোকওভেন থানার পুলিশ এই কারখানার গেটের সামনে ১৪৪ ধারার নোটিস টাঙিয়ে দেয়, বলে দেওয়া হয় বুধবার সকাল থেকে কারখানার গেটের ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো জমায়েত হলে পুলিশ আইনমাফিক ব্যবস্থা নেবে।

এই নোটিস টাঙানোর পরই কারখানার তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের জয়েন্ট সেক্রেটারি শেখ রমজানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল শ্রমিক নেতার নাম করে ওঠে “চোর চোর” স্লোগান, বের করা হয় মিছিল। আন্দোলনরত তৃণমূল কর্মীদের সেই মিছিল পৌঁছে যায় তৃণমূল শ্রমিক নেতা শেখ রমজানের বাড়ির সামনে। ,শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে কারখানার তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বহিরাগতদের ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এই তৃণমূল শ্রমিক নেতা তাদেরকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। “অথচ এখন সব জেনে বুঝেও নীরব দর্শক হয়ে আছেন” এমন অভিযোগ আন্দোলনরত শ্রমিকদের।
আন্দোলনরত তৃণমূল কর্মীরা সুবিচার চাইতে পায়ে হেঁটে নবান্ন যাবেন বলেও জানিয়ে দেন। এদিকে, “তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্র চলছে, তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে” বলে জানিয়েছেন তৃণমূল শ্রমিক নেতা শেখ রমজান। দিন দুয়েক আগে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙা শিল্পতালুকের এই বেসরকারি কারখানাতে চাকরি দেওয়ার নামে এক দৃষ্টিহীন মহিলার কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে কারখানার সদ্য গঠিত তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের জয়েন্ট সেক্রেটারি শেখ রমজানের ভাই শেখ গেন্ডার বিরুদ্ধে,। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল শ্রমিক নেতা শেখ রমজানের ভাই। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের তৃণমূল শ্রমিক নেতার বাড়ির সামনে কারখানায় কর্মী নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে দলের স্থানীয় কর্মীদের তুমুল বিক্ষোভ। এতে বিড়ম্বনা আর অস্বস্তি দুই বাড়বে ঘাস ফুল শিবিরে এমনটাই দাবি বিরোধীদের।