
বিপ্লব দাশ : আদানির পর, এপিক ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতির মুখ হয়ে উঠল বাংলা। একই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে ফের নিজের বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতির দৈন্যযুগে বাংলা ফের মনে করিয়ে দিল গোপাল কৃষ্ণ গোখলেকে। যিনি ভারতের জাতীয় রাজনীতির প্রারম্ভিক যুগে বলেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা ভাবে আগামীকাল- “What Bengal thinks today, India thinks tomorrow”।
বস্তুত ভারতীয় রাজনীতির সেই স্বর্ণযুগ এখন ইতিহাস মাত্র। দিন বদলেছে, সমাজ বদলেছে, আধুনিকতার জোয়ারে মানুষ এখন অনেক বেশী প্রচারমুখী, খবরমুখী, বিশেষ করে স্যোশাল মিডিয়ার দৌলতে। কিন্তু প্রচার যতই সহজ ও তাৎক্ষণিক হোক না কেন, ভারতীয় রাজনীতির গৌরব এখন তলানিতে। এথিক্স থেকে অনেক দূরে গিয়ে রাজনীতি এখন উন্নয়নের আদর্শ ছেড়ে অনেক বেশি কুৎসাধর্মী। যার অধিকাংশটাই ব্যক্তি কুৎসা। ফলে শিক্ষা, সচেতনতা, গ্লোবালাইজেশনের প্রভাবকে দূরে সরিয়ে ফের প্রকট হচ্ছেন জোসেফ গোয়েবলস। গোয়েবলসে কথা উঠলেই আমাদের সামনে জেগে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল। সেসময় হিটলারের তথ্য ও প্রচারমন্ত্রী ছিলেন। আকর্ষণীয় চরিত্র, প্রচারকার্যে অবিসংবাদী দক্ষতা ছিল তাঁর। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন হিটলারের একনিষ্ঠ অনুসারী। তাঁর কাজ ছিল হিটলারের পক্ষে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। মিথ্যাকে সত্য বানানো। তিনি বলতেন, মিথ্যা যখন বলবে, তখন বড় মিথ্যাই বলবে। গোয়েবেলস হিটলারপন্থী হলেও, গত শতকে আশির দশকে বহু রাজনৈতিক সমালোচককে কম্যুনিস্ট রাজনীতিতে গোয়েবলস প্রভাব পড়ছে বলে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে বাংলার সিপিএম আমলে তৃণমূল স্তরে, বলা ভালো গ্রাম্য রাজনীতিতে প্রবলভাবে গোয়েবলসের রীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে সেই সময় সমালোচকরা মুখর হয়েছিলেন।
কালে কালে তা যে রাজনীতির মূল স্রোতে এসে পড়বে তা নিশ্চয়ই অকল্পনীয় ছিল। এখন কান পাতলেই বোঝা যায় কেন একই ধরণের কুৎসা মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। কেন রাজনৈতিক নেতারা নিরন্তর বিকৃতিমূলক উচ্চারণ করে চলেন। ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে এই কার্যত মিথ্যার আশ্রয়ে ক্ষমতা প্রচেষ্টার যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছে সেখানে হ্রাস পাচ্ছে জাতীয় ইস্যু। উন্নয়ন নয়, অধঃপতনই যেন অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে রাজনৈতিক প্রচারে। এমন এক রাজনৈতিক দৈন্যতার মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে তবুও মাঝে মাঝে নজির গড়ছে বাংলা।