
বিপ্লব দাশ : সমাজের আদি প্রকৃতি হল মাটির অধিকার। আর এই অধিকারকে ঘিরে সেই আদিকাল থেকে গড়ে উঠেছে খণ্ড খণ্ড গোষ্টী। যা কাজের নিরিখে পরবর্তী কালে এক একটা জাতীর রূপ নেয়। এই মাটির অধিকার মানুষের মধ্যে কতটা প্রগাঢ় তা মহাভারতের দিকে তাকালে বোঝা যায়। যেখান আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রর মতো মহাযুদ্ধের সূত্রপাত। সেই আখ্যান আজও দৃষ্টান্তস্বরূপ। অর্থাৎ তখনও মহাভারত ছিল, আজও মহাভারত আছে। শুধু বারবার আঘাত পেয়েছে ভারতীয়তা। তাই খণ্ড খণ্ড জাত এই দেশে যতটা না স্বজাত্যবোধ নিয়ে চলে ততটা ভারতীয়তা নিয়ে চলে কিনা সেই প্রশ্ন বার বার উঠে আসছে। এর মূলে কি ব্রিটিশ যুগে এ দেশের নাগরিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া জাতীয়তাবোধ ?
বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষাকে একত্রিত করতে গিয়ে যে জাতীয়তাবোধের সুত্রপাত তার পিছনে আছে পরিকল্পিত ভাবে ভারতের আর্থিক সমৃদ্ধিকরণের ভাবনা। পরবর্তীকালে যাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক ভাবে পেয়েছি যোজনা কমিশন নামে। যার প্রবক্তা ছিলেন সুভাষচন্দ্র বোস। যেখানে জোর দেওয়া হয়েছিল প্রযুক্তির দিকটিকে। অর্থাৎ শুধু কৃষি নয়, দেশের উন্নতির জন্য চাই শিল্পায়ন। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, এতে মানুষের হাতে টাকা আসবে। ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। তাহলে কি ভারতকে একটি স্বদেশীয় বাজার হিসেবে তুলে ধরার জন্য ‘ভারতীয়তা’ এই নব্য জাতীয়তাবোধের সূত্রপাত ঘটে ?
এটা জানতে হলে চলে যেতে হয় ১৯৩৮ সালে, অধুনা ভারতের আতুড় ঘরে। স্বয়ং জওহরলাল নেহরুও এই ভাবনাকে সমর্থন করেছিলেন। বিভিন্ন সভাসমিতিতে এর গুরুত্ব নিয়ে বহু বক্তৃতাও দিয়ে ছিলেন। ফলে বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির এই স্ব স্ব স্বজাত্যবোধকে এক জায়গায় আনতে গিয়ে ‘আমরা ভারতীয়’ এই ভাবনাকে সেদিন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ? তা নাহলে স্বাধীনতার ৭৮ বছর পরও কেন সংসদীয় রাজনীতির হিসেব নিকেষ করতে হচ্ছে জাতি বর্ণ ধরে ধরে ? কেন সংরক্ষণ নিয়ে, কেন অনুদান নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা এত হিসেব নিকেশ করেন ? সমস্ত ভারতবাসীর মধ্যে যদি ভারতীয়তা নামে জাতীয়তা বোধ গ্রথিত হত তাহলে তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। অন্যান্য রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমরা যে স্বজাত্যবোধ দেখি, এই রাষ্ট্রে তা কেন ভিন্নরূপ হবে ? এমনি অনেক গূঢ় প্রশ্ন ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছে যখন থেকে এদেশে বিশেষ করে আঞ্চলিক রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়েছে।