
বিপ্লব দাশ : অভ্যর্থনা একটি রঙিন আচার। সেই আদিকাল থেকে প্রকৃতির এই অনিবার্য দায়িত্বটি পালন করে আসছে বসন্তকাল। তাই এত সাজগোজ, তাই এত রঙের বাহার। যার বার্তা বয়ে নিয়ে আসে দোল বা হোলি। পুরাতনকে মুছে, সমস্ত ব্যবধান দূর করে নতুন করে রাঙিয়ে দিতে যেন এই রঙের উৎসব। প্রকৃতির এই চিরায়ত চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি। তাই আমরা জাতপাত ধর্ম বর্ণ সব ভুলে একে ওপরকে রাঙিয়ে তুলি। এখানেই হোলির সামাজিক তাৎপর্য।
তাই শুধুমাত্র রঙ এবং আনন্দের সমাবেশ নয়, এর একটি গূঢ় অর্থ আছে যা আমরা হোলির পৌরাণিক কাহিনী থেকে উপলব্ধি করতে পারি। প্রহ্লাদ এবং হিরণ্যকশিপুর গল্প, যা অহংকার এবং নিষ্ঠুরতার উপর বিশ্বাস এবং ভক্তির বিজয়ের প্রতীক। এই ধরণের আখ্যানগুলি কেবল উত্সবকে গভীর অর্থে সমৃদ্ধ করে না বরং নৈতিকতা এবং ধার্মিকতার অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে মূল্যবান পাঠও দেয়। ফলে, এই উৎসব ঘিরে তার ধর্মীয় বা পৌরাণিক আখ্যানে না গিয়ে আমরা যদি তার সমকালীন তাৎপর্যটি অনুভব করার চেষ্টা করি সেটাই হবে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এবং অর্থপূর্ণ।
সামাজিক অবক্ষয়, রাজনীতিতে আদর্শের অবনমন, দূর্নীতি, নৈরাজ্যকে যদি অশুভ শক্তির প্রভাব হিসেবে দেখি, তাহলে হোলি বা দোলই হোক সেসবের পরাজয় বা নিধনের প্রতীক। হয়ে উঠুক সামাজিক পরিশুদ্ধতার উৎসব। কারণ শাস্ত্র বা ধর্মীয় আচারের মধ্যে আসলে যা শিক্ষনীয় তা হল সামাজিক পরিশুদ্ধতা, জীর্ণতাকে দূর করে আগামীর আহ্বান। যা আসলে এই বসন্ত পার্বণের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সেজন্যই জাতি, ধর্মকে মিশিয়ে দিতেই রঙের ব্যবহার। তাই হোলি একটি বহুস্তরীয় উৎসব। এটি যেমন একটি ঋতুর সৌন্দর্যকে আমাদের সমাজজীবনের সঙ্গে জড়িয়ে দেয়, তেমনি অশুভকে বিনাশ করে শুভর বিজয় উদযাপনও করে। যার অন্যতম মানবিক পাঠ হল সম্প্রীতি। তাই হোলি ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতির উদযাপন আনে। এই যে রঙ ছুঁড়ে অন্যকে রাঙাতে দেখা যায়, তার মধ্যেও বিশেষ তাৎপর্য আছে যা আমাদের বাধা ও দূরত্বকে ভেঙে দেয়। তখন না থাকে বয়েসের ফারাক, না থাকে জাতপাতের বাধা। রঙ যেন সমতার কারিগর হয়ে ওঠে।