
ওঙ্কার ডেস্ক : মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে ‘মানবিক করিডর’ গড়ার মার্কিন প্রস্তাব ঘিরে তোলপাড় বাংলাদেশের রাজনীতি। প্রতিবেশী দেশের মাটিকে ‘রিলিফ করিডর’-এর জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না— এই দাবিতে সরব হল একাধিক বিরোধী সংগঠন। সরাসরি নিশানায় অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিরোধী জোট দাবি করেছে, রাখাইন আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় করিডর তৈরি হলে দেশের সার্বভৌমত্ব চরমভাবে বিপন্ন হবে। এই করিডরের আড়ালে বাংলাদেশের সীমান্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরও বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে বলে অভিযোগ।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি ঢাকায় আসে মার্কিন বিদেশ দফতরের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ইয়াঙ্গন থেকে আসা মায়ানমারস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও কুকি-চিন বাহিনীর প্রতিনিধিরাও। পাশাপাশি ঢাকায় হাজির হন পাকিস্তানের বিদেশ সচিব আমনা বালোচ, যার উপস্থিতি ঘিরেও বাড়ছে জল্পনা।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সক্রিয় তৎপরতায় রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসার ভূমিকা নতুন মাত্রা পাচ্ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে ধৃত আরসা প্রধান আতাউল্লার নেতৃত্বেই নতুন বোঝাপড়ার চেষ্টা চলছে— লক্ষ্য, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক জুন্টাকে রুখতে আরাকান আর্মিকে সহযোগিতা দেওয়া।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার। গত দেড় বছরের সংঘর্ষে তার পুরোটাই কার্যত দখলে নিয়েছে ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর শীর্ষ শক্তি আরাকান আর্মি। মংডু, বুথিডং, পালেতাওয়ার মতো শহর-সহ রাখাইনের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
এই প্রেক্ষাপটে সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলে বাস করা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে ঢাকা। কিছু দিন আগেও সামরিক জুন্টার বিরোধী হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গারা, সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জুন্টা বাহিনীর পাশে দাঁড়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে। লড়াইয়ে নামে আরসা, আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজ়েশন। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এখন উলটে তাদেরই নিশানা করছে আরাকান আর্মি।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই মুহূর্তে আমেরিকার ভূমিকা মূলত মধ্যস্থতাকারীর। কূটনৈতিক মহলের মতে, এর পিছনে রয়েছে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক সমীকরণ। বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত ওয়াশিংটন মায়ানমারে চিনের নেটওয়ার্কে ধাক্কা দিতে চাইছে। কারণ, চিন ইতিমধ্যেই রাখাইনে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ শুরু করেছে। সেই বন্দরে বাংলাদেশ হয়ে পৌঁছনোর পরিকল্পনায় রয়েছে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের আওতায় তৈরি হওয়া রোড-করিডর। রাখাইন বিদ্রোহীদের দখলে থাকলে সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়তে পারে— এই আশঙ্কাতেই আপাতত উত্তেজনার পারদ চড়ছে।