
বিপ্লব দাশ : একাত্তরের যুদ্ধে ভারতের একটা লক্ষ্য ছিল, যদিও যুদ্ধটা আসলে পাকিস্তান ও মুক্তিকামী পূর্ব পাকিস্তানের। সেক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক পারদর্শীতার প্রমাণ মিলেছিল। তিনি বুঝেছিলেন, শত্রু মনোভাবাপন্ন পাকিস্তান দু দিকে তাদের আধিপত্য নিয়ে চলুক এটা ভারতের ভবিষ্যতের পক্ষে স্বস্তিকর হবে না। গত তিন দশক ধরে পাকিস্তান তাদের ত্রিকোণ ষড়যন্ত্রে যেভাবে রক্তাক্ত করে চলেছে এ দেশের মাটি, তাকে বস্তুত এক বিরক্তিকর শত্রুতা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। কোনো দিক থেকেই ভারতের সমতুল্য না হয়েও অনেকটা “স্লাম নেচার” শত্রুতা চালিয়ে যাওয়াকে আর যেমন মে৩নে নেওয়া যায় না, তেমনি পাড়ার মস্তানি সুলভ আস্ফালন করাকে কোনো সভ্য সংস্কৃতিতে ফেলা যায় না। তবে এটা যে অনেকটাই স্পনসরধর্মী তাও প্রকাশ পেয়েছে কখনো সখনো।
বর্তমান পরিস্থিতে ঠিক এখানেই কূটনৈতিক ভাবে এগোতে চেয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক মহলে ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কের এই লাগাতার অবনতিকে তাই জেনেও না জানার ভান করে এসেছে যারা, তাদেরও দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছে। বিশেষ করে মুখীয়া দেশগুলির ‘বড়দা”কে। পহেলগাঁওয়ের নাশকতার পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কবুল করেছিলেন, তিন দশক ধরে তাঁরা যে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে এসেছে তার জন্য দায়ী আমেরিকা ও ব্রিটেন। এখানেও পাকিস্তানের মানসিক দুর্বলতার পরিচয় মেলে। অনেকটা যেন পাড়ার কোনো আনপড় মোটা মাথার ব্যক্তিকে উস্কানি ও লোভ দেখিয়ে কাজ হাসিল করার মতো।
ফলে ভারতকে এবার ভাবতেই হচ্ছে এই দুর্বল দেশের ফাঁকা হুংকারের জবাব কী হওয়া উচিত। কিন্তু যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সাময়িক চাপে ফেলা যায় মাত্র। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। ভারতের অবস্থান, তার প্রতিবেশীদের চরিত্র এবং বিশ্ব রাজনীতির অনর্গল চাটুকারিতার মধ্যে ভারতের ভবিষ্যৎ ভারতকেই গড়তে হবে। এবং তা সম্ভব পররাষ্ট্রীয় চক্রান্ত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার মধ্যে। এরই প্রেক্ষাপটে ভারতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশী কার্যকরী হবে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষণ। ইন্দিরা যা পেরেছিলেন, এতদিনে তেমন একটা সুযোগ এখন ভারতের হাতে। তাই “দু টুকরো”কে এবার যদি মোদীর ভারত “তিন টুকরো” করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মুখিয়ে আছে বালুচিস্তান।