
বিপ্লব দাশ, কনটেন্ট হেড:
শুক্রবার ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। আরাবুল আর সাসপেনশন যেন সমার্থক। এর আগেও দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন, আবার ফিরেও এসেছেন। তখন তাঁকে দলে ফেরাতে বড় ভূমিকা ছিল কলকাতার তৎকালীন মেয়র তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। ভাঙড়ের রাজনীতিতে আরাবুল কোনও ‘চাপে’ পড়লে তাঁকে দলীয় নেতৃত্বের রোষানল থেকে রক্ষা করতেন তৎকালীন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই আরাবুলকে ‘তাজা নেতা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই দুই নেতাই রাজনীতির মূলস্রোত থেকে দূরে। ‘অভিভাবকহীন’ আরাবুল এখন ক্রমশ ব্রাত্য তৃণমূলে। প্রয়োজন ফুরিয়েছে তাঁর?
এইট পাস আরাবুল ইসলাম ‘দামাল ছেলে’ তৃণমূলের। ভাঙড় কলেজের অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুড়ে মেরে ‘বিখ্যাত’ হয়েছিলেন। কখনও আবার স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্ন কেন কঠিন, তাই ইনভিজিলেটরদের ডেকে পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ‘গুরু’ পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথমবার শিক্ষামন্ত্রী হয়ে দফতরের দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম দিনেই পুষ্পস্তবক নিয়ে বিকাশ ভবনে স্বাগত জানাতে যান আরাবুল, যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। ক্লাস এইট পাস আরাবুল ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতিও হন। আবার এই আরাবুল খুনের দায়ে জেলও খাটেন। এবার দল থেকে বহিষ্কার।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের প্রাক মুহূর্তে ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙড় থেকে জয়ী হন আরাবুল। তখন দলে তাঁর কদর ছিল আলাদা। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে জয়ী বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন বিরোধী দলনেতা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভাঙড় তখন তৃণমূলের কাছে সোনার বাটি। আরাবুলও ভাঙড়ে তখন থেকেই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। কিন্তু বিধায়ক হওয়ার পরই ভাঙড়ে তাঁর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয় অপর এক গোষ্ঠী। যার নেতৃত্বে ছিলেন নান্নু হোসেন (গাজী)। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও নির্দল হয়ে দাঁড়ানো নান্নু হোসেনের (গাজী) সঙ্গে ভোট কাটাকাটিতে পরাজিত হন আরাবুল। ভাঙড়ে জয়ী হয় সিপিএম। আরাবুলের এই গোষ্ঠীই পথের কাঁটা হয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভাঙড়ে জয়ী হন আইএসএফ প্রার্থী নওসাদ সিদ্দিকী। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই বিধানসভা হাতছাড়া হওয়ার বেশ বীরাঙ্গনায় পড়ে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও উত্তপ্ত হয় ভাঙড়। হারানো জমি ফিরে পেতে আরাবুল বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হন ভাঙড়ের নিরীহ গ্রামবাসীরা। বোমাবাজি, গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হন বেশ কয়েকজন। বেশ কয়েকজন আইএসএফ কর্মী খুন হন বলে অভিযোগ ওঠে আরাবুল বাহিনীর বিরুদ্ধে।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভাঙড় কেন বারবার তৃণমূলের হাতছাড়া? দলীয় অর্ন্ততদন্তে জানা যায় আরাবুলই রয়েছে এর পিছনে। তখন থেকেই ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক সৌকত মোল্লাকে ভাঙড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার খুনের দায়ে ৭ মাসের জেল। ফের ফিরে এসে এবার সৌকতবাহিনীর সঙ্গে টক্কর আরাবুলের। নতুন বছরের দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ফের উত্তপ্ত হয় ভাঙড়। এবার দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ করতে যান আরাবুল। যা দল ভালোভাবে নেয়নি। তাই আর দেরি নয়। ফের বহিষ্কার করে দল থেকেই চিরতরে ছেটে দেওয়া হল আরাবুলকে? শোনা যাচ্ছে আরাবুল ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ফের খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এবার ‘তাজা নেতা’র ভবিষ্যৎ কী ? দলে নেই কোনও ‘অভিভাবক’। তৃণমূলের এক সময়ের মূলস্রোতের ‘তাজা নেতা’ আজ সহায়-সম্বলহীন।