
বিপ্লব দাশ : প্রায় রোজই সংবাদের শিরনামে উঠে আসছে কোনো না কোনো খুনের ঘটনা। মোটিভ যাই হোক না কেন পরিনাম একই। তাই এই চরম অপরাধমূলক কার্যকলাপ নিয়ে না ভেবে উপায় নেই প্রশাসনের, কিন্তু এর থেকে উত্তরোণের উপায় কী সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কোনো দিশা দিতে সক্ষম নন সমাজবিজ্ঞানীরা কিংবা অপরাধ নিয়ে যাঁরা মনোস্তাত্বিক গবেষণা করেন তারাও। এটা যে মানুষের একটি আদি অপরাধ জনিত প্রবৃত্তি তা মানছেন সকলে। অথচ শিক্ষা বাড়ছে, জীবন যাপনের ধ্যনধারণা উন্নত হচ্ছে, তবুও এই অপরাধ প্রবণতা থেকে কেন মুক্ত হতে পারছে না মানুষ, এটা একটা বড় প্রশ্ন।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, এর পিছনে নানান কারণ রয়েছে। মহিলা ও শিশুদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে, পণের জন্য খুন বেড়েছে, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, পরকীয়ার ঘটনাও রয়েছে। প্রেম ঘটিত বিবাদের জন্য খুনের ঘটনা অনেক বেড়েছে। কারণ আরও আছে। জাতপাত নিয়ে বিরোধ, দলিতদের উপর নির্যাতন, রাজনৈতিক কারণে খুন, ধর্ষণের পরে খুন এবং আরও ভয়ের ব্যাপার হল নরবলি। এনসিআরবির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৭৮টি খুনের ঘটনা ঘটে বলে নথিভুক্ত আছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৩টির বেশি হত্যাকাণ্ড হয় দেশে। এই তথ্য যথেষ্টই উদ্বেগের কারণ। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি ?
ইতালির চিকিৎসক সিজার লোমব্রোসোকে অপরাধবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। ১৮৭০ সালে ইতালির তুরিন শহরের কারাবন্দী অপরাধীদের ওপর তিনি একটি বিশেষ গবেষণা করেছিলেন। তাঁর পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছিল, ‘যারা অপরাধী বা হত্যাকারী তাদের কান সাধারণ মানুষের চেয়ে লম্বা হয়। নাক বোঁচা হতে পারে।’ তাহলে কী বড় কোনো অপরাধী বা হত্যাকারী হুট করে হত্যাকারী হয়ে যান না। লোমব্রোসো বলেছিলেন, জন্মগতভাবেই তাঁরা হত্যাকারী। তাঁদের ভেতরে হয়তো এই প্রবৃত্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোনো কোনো ঘটনায় তা প্রকাশ পায়। আর তখনই হত্যাকারী হয়ে ওঠে ওই ব্যক্তি। অপরাধবিজ্ঞানের জনক হলেও লোমব্রোসোর এই তত্ত্ব মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ বহু বিজ্ঞানী মনে করেন, এই তত্ত্বই মানুষকে হত্যাকারী হয়ে উঠতে প্ররোচনা দিতে পারে।
লোমব্রোসের গবেষণার প্রায় ১১০ বছর পর ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো হত্যাকারীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে গবেষণা শুরু করেন ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্ট অধ্যাপক আদ্রিয়ান রেইনে। তিনি এই গবেষণা করেন নৃশংস হত্যাকারীদের ওপর। গবেষণায় আদ্রিয়ান রেইনে ও তাঁর দল হত্যাকারীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখেছেন, তাদের সবার মস্তিষ্কের একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় এবং একইভাবে সাড়া দেয়। হত্যাকারীদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং মস্তিষ্কের ‘অ্যামিগডালা’ নামের একটি অঞ্চল অতিরিক্ত কাজ করে ফেলে। প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর মস্তিষ্কের ছোট্ট একটা অংশ, বড়জোর একটা বাদামের মতোন বড় অ্যামিগডালা। কিন্তু যেকোনো একটা স্টিমুলেশন পেলে ওই অ্যামিগডালাই মুহূর্তের মধ্যে আবেগকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আর তখনই কেউ ভয় পায়, খুশি হয়, কারও ক্ষোভ জাগে, খুনি হয়। ফলে এটা যখন শরীরেরই বিক্রিয়া, তার ফলাফলে কারই বা আগাম দায় থাকে !