
কুশল চক্রবর্তী
ভারতীয় রিসার্ভ ব্যাঙ্ক দেশের অর্থনৈতিক বা শিল্পের অগ্রগতির কথা মাথায় রেখে রেপো রেট কমালো বা ব্যাঙ্কগুলোকে আরও কম সুদে ঋণ দেবার কথা ঘোষণা করল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কথা ভেবে, এতে তো আনন্দিত হবারই কথা। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত বোঝা যাচ্ছে, এই কাজের ফলে কিচ্ছু কিছু চিন্তার কথা যে বলা হয়েছিল, তা ঘটতে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলো মেয়াদী জমা বা ফিক্সড ডিপোসিটে সুদ কমাচ্ছে, এটা তো হবারই ছিল। এবার দেখা গেল ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক ষ্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, তাদের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-এর সুদও কমাচ্ছে। এবার তাদের সেভিংস ব্যাংকে টাকা রাখলে গ্রাহক পাবে মাত্র ২.৫ শতাংশ সুদ। আগে তারা পেত ২.৭ শতাংশ সুদ। মানে ০.২ শতাংশ প্রাপ্ত সুদ তার কমে যাবে। একটি সমীক্ষা বলছে সাধারণত ৬০ ঊর্ধ্ব লোকেরা বা গরীব লোকেরাই বেশী সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ টাকা রাখে। কারণ, জীবনের অনিশ্চয়তা তাদের বাধ্য করে হাতে নগদ টাকা রাখতে অথবা যখন তখন তুলে আনা যায় এমন টাকা রাখতে।
তাহলে যে সব মানুষ সিনিয়ার সিটিজেন বা মুলত মেয়াদী জমার উপর ভিত্তি করেই তাদের জীবন চালান তাদের অবস্থা কি হব সহজেই অনুমেয়। অন্য দিকে দেখুন, ০.২ শতাংশ সুদ কমিয়ে দেবার জন্য এই ব্যাঙ্ক বার্ষিক ৫৭৫০ কোটি টাকা লাভ করবে। ভারতের সর্ববৃহৎ ব্যাঙ্ক কেন এমন করতে হল ? সঠিক কারণ হয়ত বলা মুশকিল, তবে ২০২৪-২৫ সালে যে বিরাট ধারের টাকা তারা তাদের হিসাব থেকে মুছে দিয়েছিল, তার কিছুটা সামাল দিতেই হয়ত তারা এই পদক্ষেপ নিল। দেখুন ২০২৩-২৪ সালে এই ব্যাঙ্ক ১৭৬৪৫ কোটি টাকার ধার তাদের হিসাব থেকে মুছে দিয়ে ছিল। ২০২৪-২৫ সালে ঋণ মোছার অংক বেড়ে দাঁড়াল ২৬৫৪২ টাকায়। ভারত বর্ষের ৫০ কোটি লোকের চেয়েও বেশী লোক এই ষ্টেট ব্যাংকের গ্রাহক।
ধরা যাক তাদের বিরাট অংশ সাধারণ মানুষ। অতএব তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সুদ কেটে তা কাজে লাগান হল সেই সব বৃহৎ আর মাঝারি শিল্পপতিদের শোধ না দেওয়া ঋণের বোঝা ব্যাংকের কাঁধ থেকে কমাতে। অন্য দিকে দেখুন এই ব্যাঙ্ক বড় বড় করে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলছে, তারা গ্রাহক পরিষেবা সঠিক ভাবে দেবার জন্য এখন প্রায় ১৮ হাজার কর্মী নিয়োগ করছে তাদের ব্যাঙ্ক।
কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এই ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা ২০২৪ এর মার্চে ছিল ২.৩২ লক্ষ, নতুন লোক নেবার পর তা বেড়ে ২০২৫ এর মার্চে হবে মাত্র ২.৩৬ লক্ষ। অথচ এই ব্যাংকে ২০২২ সালে কর্মী সংখ্যা ছিল ২.৪৪ লক্ষ। অর্থাৎ কিনা ষ্টেট ব্যাংকের কর্মী সংখ্যা ২০২২ সালের চেয়েও কম থাকবে। যে সব রাজনৈতিক নেতারা কোভিড পরবর্তী ভারতীয় অর্থনীতির নিদারুণ উন্নতির কথা বলেন, এবং তার জন্য আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, তারা কী বোঝেন না যে ব্যাংকের কাজের অগ্রগতির সঙ্গে অর্থনীতির উন্নতি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
তাহলে, এই ব্যাংকের কাজ সবদিক থেকেই বেড়েছে। আর গ্রাহক পরিষেবা কখনই পুরপুরি যন্ত্র নির্ভর নয়। তবে কি করে ২০২২ সালের চেয়েও কম কর্মী দিয়ে এই ব্যাংকের বিপুল সংখ্যক গ্রাহক পরিষেবার মান এমন হওয়া সম্ভব যে, যাকে কিনা সকল গ্রাহক প্রশংসা করবে। পরিশেষে একটা কথাই বলা যায় যে, ২০২০ সালের মার্চে এই ষ্টেট ব্যাংকের গ্রাহক ছিল প্রায় ৪৪.৮৯ কোটি আর ২০২৫ সালের মার্চে এসে তা দাড়িয়েছে ৫০ কোটির বেশী। হাজার যন্ত্র লাগালেও এত সংখ্যক গ্রাহককে ২.৩৬ লক্ষ কর্মচারী দিয়ে হাসিমুখে বাড়ি পাঠানো যাবে কি ?