
বিপ্লব দাশ : সাহিত্যে নয়, বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে হঠাৎই শোরগোল শোনা যাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে। কী এমন ঘটল, যাতে ওপার বাংলার এক সাহিত্যিককে নিয়ে সংসদে মুখ খুললেন এপার বাংলার এক সাংসদ, তাও আবার বিজেপির। সাহিত্য থেকে শত হাত দূরে থাকা রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ কেন বিষয় হয়ে উঠল তসলিমা তা নিয়ে যারপরনাই বিস্মিত বুদ্ধিজীবী মহল।
যেহেতু সামনের বছর এ রাজ্যে ভোট, তাই আবার এর মধ্যে ভূত দেখছেন কেউ কেউ। কী তার গূঢ় কারণ, আসল সমীকরণটাই বা কী, সেই সব অদৃশ্য ডাটা নেড়েচুড়ে দেখতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাল মেলাতে গিয়ে গরম হচ্ছে বাজারও। বিষয়টি ভারতের নাভিমূলে ওঠায় হয়তো আশা বাঁধছেন তসলিমা। সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, “জানি না, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না। তবে তিনি যে আমার কথা মনে করেছেন, মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ, তা উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।”
এবার আসি সংসদে দাঁড়িয়ে কি বলেছিলেন শমীকবাবু ? বলেছিলেন, “তসলিমাকে সুরক্ষিতভাবে কলকাতায় আশ্রয় দেওয়া হোক”। কিন্তু বিজেপির উদ্যোগে তসলিমার কলকাতা ফেরার দাবি উঠতেই মুখ খুললেন গায়ক-সঙ্গীতকার কবীর সুমনও। প্রশ্ন তোলেন, “তসলিমা কলকাতায় ফিরতে চান, কিন্তু বাংলাদেশে ফিরতে চান না কেন?” বাকবিতণ্ডা যাই হোক না কেন, দু দেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই যে তসলিমা ইস্যু হয়ে উঠলেম সংসদে, একে হেলাফেলা ভাবলে হবে না। যেহেতু কথাটা উঠেছে সংসদে, তাও আবার বিজেপির তরফে, তাই ‘ডাল মে কুছ কালা’ ধরণের সম্ভাবনা তো থাকছেই।
সামনের বছর বাংলার নির্বাচন। আর তসলিমার হয়ে সংসদে সওয়াল করলেন একজন বিজেপি নেতা। এত সহজে বিষয়টি সরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে কানাঘোঁষা শোনা যাচ্ছে, ২৬শের নির্বাচনে মৌলবাদ বিরোধী তসলিমাকে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। কারণ তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণে’র অভিযোগ ওই দলের একটি প্রকৃষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা। সংসদে দাঁড়িয়ে শমীক ভট্টাচার্য বলেছিলেন, আমি বলতে চাই, ছদ্ম প্রগতিশীলতার আড়ালে মুসলিম মৌলবাদের কাছে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক। তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক। বাংলার নারী আন্দোলনের নতুন সূর্যোদয় হোক।”