
ওঙ্কার ডেস্ক: সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতের ঘোষণার পর রীতিমতো কড়া সুরে পাল্টা জবাব দিল পাকিস্তান। জলপ্রবাহে বাধা দেওয়া হলে সেটিকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিল ইসলামাবাদ। শুধু তাই নয়, শিমলা চুক্তিসহ ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। পাশাপাশি, দু’দেশের মধ্যে সব ধরনের বাণিজ্যও স্থগিত করেছে ইসলামাবাদ। এমনকি ভারতকে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্যও নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা।
১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি, যা ১৯৭১-র যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তির অন্যতম মূল ভিত্তি ছিল, তাকেও ‘স্থগিত রাখা’ হতে পারে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। সেই চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, যুদ্ধবিরতির সময় যে বাহিনী যেখানে ছিল, তারা সেখানেই থাকবে এবং একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করা যাবে না।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বুধবার রাতে জানায়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত থাকবে। এর পরেই ইসলামাবাদের এই পাল্টা প্রতিক্রিয়া। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, পাকিস্তান সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রায় দু’ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে শাহবাজ় শরিফের সরকার এক বিবৃতি জারি করে জানায়, ভারতীয় উড়ান সংস্থাগুলিও আর পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না।
বাতাস গরম হচ্ছে কূটনৈতিক অঙ্গনেও। নয়াদিল্লির ঘোষণায়, পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের ‘অবাঞ্ছিত’ বলে ঘোষণা করে দেশে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাত দিনের মধ্যে। একইসঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের ফিরিয়ে আনার কথা জানানো হয়েছে। দুই দেশের দূতাবাসেই কূটনীতিকের সংখ্যা কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
এ দিন বিকেলে ইসলামাবাদ থেকেও একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করা হয়। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত প্রতিরক্ষা আধিকারিকদের পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে শাহবাজ় সরকার।
ওয়াঘা সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। সেই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘সার্ক’ ভিসা বাতিল। যে ভারতীয়রা ওই ভিসায় পাকিস্তানে গিয়েছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, ভারতের তরফেও বুধবার রাতেই সীমান্ত বন্ধ ও ভিসা বাতিলের নির্দেশ জারি হয়েছে।
উত্তেজনার পারদ চড়ছে দুই দেশের সীমান্ত, কূটনীতি ও বাণিজ্যিক স্তরেও। একের পর এক কড়া পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ায় ফের এক বার অনিশ্চয়তার ছায়া ঘনাল বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।