
বিপ্লব দাশ : অতীত আমেরিকার দায় মেটাতে এগিয়ে এল বর্তমান আমেরিকা। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তির আশা দেখা যাচ্ছে। বস্তুত, এই যুদ্ধের শিকড় খুঁজলে বোঝা যাবে পশ্চিমী আগ্রাসনের বাসনাই এর আসল জ্বালানি। পুতিন তাতে আগুন ধরিয়েছেন মাত্র। যুদ্ধ শুরুর পিছনে যে একটি বহুমাত্রিক বিপর্যয় রয়েছে তা নিশ্চয়ই এতদিন পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিপদ হল এর মধ্যে কোথাও যেন উঁকি দিচ্ছিল ভাবি বিশ্বযুদ্ধের। কারণ, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা যে পশ্চিমী আগ্রাসনের প্রতিরোধ তা বহু আগে ঠারে ঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন পুতিন। এই পশ্চিমী আধিপত্যের কলকাঠি যে আমেরিকার হাতে তা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না। জো বাইডেনের ভূমিকা এ কথাই প্রমাণ করে। যেহেতু আমেরিকা ও তার ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেন যুদ্ধের উদ্ভূত ঘটনাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল তাই এই বিপর্যয়ের জন্য ন্যাটোভুক্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলির যেমন দায় থেকে যায়, তেমনি তার মিত্র আমেরিকারও। ফলে রাশিয়া হামলা চালালেও, যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল আমেরিকা ও তার মিত্র ন্যাটোভুক্ত দেশগুলির পূর্ব বিশ্বে আধিপত্য নেওয়ার বাসনায়। কার্যত তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হল ইউক্রেনকে।
মিখাইল গর্ভাচভের গ্লাস্তনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকার ফলে যখন সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখন কেজিবির অফিসার ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। সোভিয়েত রাশিয়ার এই ভগ্নরূপ তিনি কক্ষনো মেনে নিতে পারেননি। প্রথম থেকেই পুতিন ছিলেন সংযুক্ত রাশিয়াপন্থী। অবশ্যই বলশেভিক। তিনি বলেছিলেন, “যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে মিস করে না তার কোনও হৃদয় নেই। যে এটি ফিরে পেতে চায় তার কোনও মস্তিষ্ক নেই।” তাঁর অটোবায়োগ্রাফি পড়লে জানা যাবে, রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ছিটকে যাওয়া দেশগুলিকে স্বাধীন রাষ্ট হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। সোভিয়েত ইউনিয়ান ভেঙে যাওয়ার ঘটনাকে তিনি মনে করেছেন, “শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়” । তাই ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যকে সামনে রেখে তিনি ইউক্রেনকে একটি নির্মিত দেশ বা ভুয়ো দেশ বলে অবিহিত করেছেন। সমগ্র ইউক্রেন জয় করে রাশিয়ার সাথে একত্রিত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি। এর কারণ, সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। চুক্তি ভেঙে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার চেষ্টাই এই যুদ্ধের প্রকৃত কারণ হয়ে দাঁড়াল। পূর্ব বিশ্বে ন্যাটোর এই সম্প্রসারণের পরিকল্পনাই পুতিনের কাছে ছিল একটা হুমকি। যা রাশিয়ার সুরক্ষা ও জাত্যভিমানকে আঘাত করেছে।
আশার কথা, ভবিষ্যতের এই দুর্যোগ উপলব্ধি করতে পেরেছেন আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকালে তিনি জানিয়েছিলেন, নির্বাচনে জিতলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি বন্ধ করে দেবেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই হয়তো ট্রাম্পের এই উদ্যোগ একটি ইতিহাস গড়তে চলেছে।