
বিপ্লব দাশ : ইরান ইসরায়েল সংঘর্ষ আদৌ কোনো তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়। এর শিকড় ছড়িয়ে আছে অনেক গভীরে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগ পর্যন্ত এই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী ইরানে এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় যা ইসরায়েলের বিরোধিতাকে তাদের রাষ্ট্রীয় আদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তোলে। তখন থেকেই ইরান ইসরায়েলের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে থাকে। এমন কি তার নির্মূলও চায়। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, ইসরায়েল একটি ক্যান্সারযুক্ত টিউমার। একে নিঃসন্দেহে উপড়ে ফেলতে হবে কিংবা ধ্বংস করা হবে”। লেবাননের শিয়া জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সহ এই অঞ্চলে তার প্রক্সি শক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইরানের আর্থিক সাহায্য ও অস্ত্র সরবরাহ করার কারণ এটাই। ফলে ইসরায়েল মনে করে ইরান তাদের অস্তিত্বের ক্ষেত্রেন্য প্রকৃতই হুমকি। সম্প্রতি এর সঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা।
ইসরায়েলের সঙ্গে জাতি শত্রুতার কারণে ১ অক্টোবর ইরান ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালায়। সেই হামলায় ইসরায়েলে ১৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল ইরান। ইরান জানিয়েছিল, এই আক্রমণ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং হামাসের নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ। যদিও তার অধিকাংশই রুখে দিয়েছিল ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী। এতে কিছু বিমান ঘাঁটি ধ্বংস হয়, একজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এরপরই ইসরায়েল প্রতিশোধ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। গত শুক্রবার গভীর রাতে ইসরায়েল যে হামলা শুরু করে তার পিছনের কাহিনি এটাই। ইসরায়েলের উপর ইরানের সরাসরি আক্রমণের আগে, দু দেশের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে ছায়াযুদ্ধে চলে আসছিল। তাকে আরও উস্কে দেয় ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি। মে মাসে, বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান বলেছিলেন যে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ থেকে “কয়েক সপ্তাহের চেয়ে কয়েক মাস দূরে”। তবে, এর অর্থ এই নয় যে ইরান বোমা তৈরি থেকে কয়েক সপ্তাহ দূরে। এখনও সেই উপকরণকে সামরিক স্তরে সমৃদ্ধ করার এবং ওয়ারহেড রাখার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হবে, যা তাদের কাছে নেই বলে মনে করা হয়।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও, ইসরায়েল নয়। এনপিটির লক্ষ্য পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার বন্ধ করা এবং সদস্যদের তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি চুক্তি হয়, যাতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেওয়ার পর ওই চুক্তি মূলত ভেঙে পড়ে। তখন থেকে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ফের জোরদার করে। একই সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ায় একটি শক্তিশালী জোট গড়ে তোলার কাজে উদ্যোগী হয় ইরান। এটাই আসলে ইরাক ইসরায়েল সংঘর্ষের মূল কারণ। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় ইরাক জোট যদি এই সংঘর্ষে যুক্ত হয় তাহলে আমেরিকাও পিছিয়ে থাকবে না। ইরান ও ইসরায়েল যে ভাবে তাদের অবস্থানে অনড় তাতে পরিস্থিতি কি বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোবে ? পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সঙ্গে বিভিন্ন প্রান্তে যে ভাবে সংঘর্ষ বাড়ছে তাতে কি বিশ্বের উন্নয়ন ভেঙে পড়ছে না ? উন্নয়ন মানেই কী অস্ত্রের কারবার !