
বিপ্লব দাশ : মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিশ্ববাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক ডামাডোলের ছবিটা যেন প্রকট হচ্ছে। আমেরিকার কারণে ইসরায়েলের একগুঁয়ে মারোন্মুখিতা এবং ইরানের দাম্ভিক প্রত্যাঘাতের ফলে যে ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যৎ ঘনিয়ে উঠছে তা জেনেও অনড় দুই পক্ষ। ১৩ জুন রাত ২টোয় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলি ইরানের অস্ত্রভান্ডারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় ইরানের তরফে প্রবল প্রত্যাঘাত। যার জেরে কেঁপে ওঠে বিশ্ববাজার। ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ছাড়িয়ে যায় ব্যারেল প্রতি ৭৪.২৩ ডলার। এসএন্ডপি ৫০০ এর দাম ১% এরও বেশি কমে যায়। সোনার দাম রেকর্ড ৩,৪০০ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছে যায়। এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি জ্বলন্ত লাল সংকেত। যদি ইসরায়েল এবং ইরানের মুখোমুখি সংঘর্ষ চলতে থাকে, তাহলে এর প্রভাব অচিরেই ছড়িয়ে পড়বে গোটা বিশ্বে। এবং তা যে কোনো সময়েই হতে পারে।
এই সংযুক্ত এবং আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে, ভৌগোলিক অবস্থান তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যের ধরণ তৈরি করে এবং অতিক্রমও করে। হরমুজ প্রণালী কেবল পারস্য উপসাগরের একটি সংঘাতস্থল নয়, এটি বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির জন্য একটি চাপ ভালভ। লোহিত সাগর আফ্রিকায় শস্য, ইউরোপে ইলেকট্রনিক্স এবং এশিয়ায় শক্তি সরবরাহের জন্য একটি জীবনরেখা হিসেবে কাজ করে। আজকের অর্থনীতি গতির জন্য যা অনিবার্য, ভেঙে পড়ার জন্য নয়। তাই, যখন কোনও আঞ্চলিক সংঘাত সার্কিট ভেঙে দেয়, তখন ব্যবস্থাটি তার স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে পারে না, এক্কেবারে ভেঙেই পড়ে।
যা ঘটছে তা কোনও রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে প্রক্সি সংঘর্ষ নয়। এই দুটি আঞ্চলিক হেভিওয়েট, যাদের প্রকৃত সামরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদের মধ্যে কোনও অফ-র্যা ম্প দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, এর প্রভাব পড়বে। তেল সহজেই প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেপ অফ গুড হোপের চারপাশে হাজার হাজার মাইল দূরে শিপিং লেনগুলিকে পুনরায় রুট করতে হতে পারে। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলিকে এখন সব ফেলে একথাই ভাবতে হবে।