
অরূপ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম : জঙ্গলমহলে প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে করা হয় পাহাড়ের পুজো. হ্যাঁ, প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই পাহাড়ের পুজো করা হয়. প্রতিবছর আষাঢ় মাসে বেলপাহাড়ির কানাইসোর পাহাড়ে পূজো দেওয়া হয়। এই পুজোয় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এবারও ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায় কানাইসোর পাহাড় পুজোয় সামিল হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ । প্রতি বছর আষাঢ়র তৃতীয় শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী চলে এই মেলা। শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত মেতে ওঠেন বাংলা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় গাড়রাসিনি, খড়িডুংরি সহ যে সমস্ত পাহাড় পুজো অনুষ্ঠিত হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাহাড় পুজো হল এই কানাইসোর পাহাড়ে পুজো। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই কানাইসোর পাহাড় পুজো অনেক প্রাচীন। মূলত, এখানকার আদি জনজাতি বাসিন্দারা চাষবাসের আগে প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই পাহাড়ের পুজো করে থাকেন। লোকবিশ্বাস মতে এই পাহাড় পুজো করলে চাষবাস ভাল হবে। অতিবৃষ্টিতে কেউ বানভাসি হবে না। হড়পাবান হবে না। তাই চাষবাস শুরু করার আগে কৃষিজীবী সবাই পাহাড়ে পুজো দেন।
জানা যায়, বহু বছর আগে এলাকায় প্রবল বন্যায় ঘরবাড়ি ,গরামথান বা গ্রাম রক্ষার দেবতা সমস্ত কিছু ভেসে গিয়েছিল। পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী ঢেঙাম গ্রামের বাসিন্দারা সেই সময় পাশাপাশি অন্যান্য গ্রামবাসীদের সাথে সভা করে তবে গ্রাম রক্ষার দেবতাকে এই পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সময় থেকেই এই পাহাড়ে ঢেঙাম গ্রামের মাহালি সম্প্রদায় পুজারী হিসেবে রয়েছেন। অন্যান্য গরামথানের মত পোড়া মাটির হাতি ঘোড়ার মূর্তি উপবিষ্ট করে পুজো করা হয়। পুজোয় মুরগি বা ছাগ বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে।
পাহাড় পুজো ঘিরে এখানে বড় আকারের মেলা বসেছে । এই মেলাতে লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমস্ত রকমের বাদ্যযন্ত্র ও কৃষি কাজের নানান সামগ্রী পাওয়া যায়।