
সুমিত চৌধুরী: আর দেরি না করে বড় পুজোর উদ্যোক্তাদের এবার দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।
এবারের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে রাম মন্দির মন্ডপকে কেন্দ্র করে যেটা ঘটেছে সেটা বিপদজনক বাড়াবাড়ি। অষ্টমীর সন্ধ্যা ভীর নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুক্ষণের জন্য দর্শনার্থীদের আটকেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তাতেই ও প্রকাশ করেছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। পুজোর উদ্যোক্তা যেহেতু বিজেপির সজল ঘোষ
ব্যাপারটাতে রাজনীতির রং লেগেছে। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে হুজুকে জনতা যেরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে সরু সরু রাস্তা এন্টি পয়েন্ট দিয়ে মণ্ডপের দিকে এখনো চেষ্টা করছিলেন তাতে বড় কোন অঘটন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো।
অঘটন ঘটলে তার দায় কিন্তু প্রশাসনের উপরে এসেই পড়তো।
এমনিতেই পুজোর সময় শিয়ালদা সংলগ্ন রাস্তাঘাট গুলিতে জেলা থেকে আসা জনতার একটা অস্বাভাবিক ভিড় থাকে। বরাবরই দেখা গেছে ওই সমস্ত এলাকাগুলিতে জনতার ভিড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আগে তাও ভিড়ের একটা বড় অংশ শিয়ালদা স্টেশনে নেমেই সোজা কলেজ স্কোয়ার বা মোহাম্মদ আলী পার্কের মন্ডপের দিকে এগোতো। এই দুটো পূজোয় তুলনামূলকভাবে বড় রাস্তার উপরে। কলেজ স্কোয়ারকে ঘিরে চারদিকে মোটামুটি প্রশস্ত রাস্তা আছে।
কিন্তু সজল ঘোষের পূজো এমন একটা জায়গায় অবস্থিত যেখানে শিয়ালদা দিক থেকে ঢুকবার প্রত্যেক কটা রাস্তাই প্রায় সরু গলি পথ ধরে। এখানেই বড় বিপদের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।
তাছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের রাম মন্দির মন্ডপ দেখে হাজার হাজার জনতা একসঙ্গে শিয়ালদা স্টেশনে ঢুকছেন। ট্রেনে সামান্য গাপ পরলেই পরিস্থিতি নারকে অবস্থায় চলে যাচ্ছে। তার মধ্যে সপ্তমীর সন্ধ্যায় আশঙ্কা অল্প কিছুক্ষণের জন্য শিয়ালদা স্টেশন চত্বরের কারেন্ট চলে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় বিপদজনক ফ্লাশ পয়েন্ট তৈরি হচ্ছে।
উদ্যোক্ত তা উদ্যোক্তারা ভিড়ের নেশায় মরিয়া। হুজুকে জনতা কাণ্ডজ্ঞানহীন। প্রশাসন নেতা সামলাবে জনতা সামলাবে না ট্রাফিক সামলাবে বুঝে উঠতে পারছে না। এন আর এস এর মত হাসপাতাল জেলার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের বিভিন্ন মোড়ে নো এন্ট্রি বোর্ড ঝুলে যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সটা বাজিয়েও দাঁড়িয়ে থাকছে। কিন্তু তাতেও কারো কোন বিকার নেই।
পুজোর উদ্যোক্তাদের ভিড়ের জন্যই মরীয়া উন্মাদনা যে আশঙ্কা এবছরই শুরু হয়েছে এমনটি নয়। এর আগে “এত বড় দুর্গা “বিজ্ঞাপন দিয়ে “দেশপ্রিয় পার্কের “পুজো শুরু করে সপ্তমীর সন্ধ্যাতেই বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। অবস্থা এমন ছিল যে পুলিশ কমিশনারের গাড়ি এগোতে পারেনি। পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ শেষ পর্যন্ত মেট্রো করে কালীঘাটে নেমে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন।
নদীয়া থেকে খবর এসেছে কল্যাণী শহরের কয়েকটি পুজো এমন অতিকায় লেভিয়াথানে পরিণত হয়েছে যে গোটা শহর পূজো দেখতে আসা হুজুগে জনতার ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারোর খেয়াল থাকছে না, নদীয়া জেলার জে এন ইউ হসপিটাল এবং গান্ধী হসপিটাল এই দুটি হসপিটাল দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশের মানুষের বিপদের দিনে ভরসা। সেই হসপিটাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ঢোকাও মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কল্যাণীর এই বড় পুজোর পৃষ্ঠপোষক ও রাজনৈতিক দাদারা।
আত্মসংযম ছাড়া এ বিপদ থেকে বেরোনোর কোন রাস্তা নেই। পুজোর উদ্যোক্তারা যদি সচেতন হন ভালো। না হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে কোন অনাগত ট্রাজেডির জন্য।