
ওঙ্কার ডেস্ক : কলকাতার ইতিহাস আর ঐতিহ্য আজও শহরের নানা অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন ভবনগুলির মাধ্যমে জীবন্ত। তবে বহু হেরিটেজ ভবনেই বর্তমানে অযত্ন, অবহেলা ও আইনি জটিলতার কারণে দেখা দিচ্ছে ধ্বংসের আশঙ্কা। এই প্রেক্ষাপটে কলকাতা পুরসভা শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য রক্ষায় একগুচ্ছ নতুন নির্দেশিকা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া চালু করেছে, যা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে কলকাতা শহরে প্রায় ১,৪০০-রও বেশি হেরিটেজ ভবন রয়েছে। পুরসভার তালিকাভুক্ত ভবনগুলির মধ্যে গ্রেড-১ শ্রেণির ৭১৭টি ভবন গ্রেড-২এ-তে ২১৬, গ্রেড-২বি-তে ১১৯ এবং গ্রেড-৩-এ রয়েছে প্রায় ৩৩০টি ভবন। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬০০টি হেরিটেজ ভবনের সংস্কার সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুরসভা।
তবে পুরসভার এক আধিকারিক জানান, গ্রেড-২এ, ২বি ও গ্রেড-৩ শ্রেণিভুক্ত প্রায় ৬০০টিরও বেশি ভবনের আংশিক ভাঙচুর, সংস্কার বা সম্প্রসারণ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করা যাবে। এতদিন অনুমোদন পেতে মাসের পর মাস সময় লেগে যেত, যার ফলে অনেক ভবনের অবস্থাই আরও খারাপ হয়ে পড়েছে।
অনেক সময় বাড়ির মালিকেরা জানতেই পারেন না তাঁদের সম্পত্তি হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। কেউ আবার সেই তকমা সরিয়ে দিতে চান। কেউ আবার প্রোমোটারকে দিতে গিয়ে আইনি জটিলতায় পড়েন। এ সব সমস্যার সমাধান করতেই এই নতুন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, হেরিটেজ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন প্রথমে যাবে পরিবেশ ও হেরিটেজ বিভাগে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলে আবেদন যাবে এনওসি পর্যায়ে।
নতুন ব্যবস্থায় প্রথমে আবেদন যাবে পরিবেশ ও হেরিটেজ বিভাগে, তারপর এনওসি, বিল্ডিং বিভাগের যাচাই এবং হেরিটেজ কনজ়ারভেশন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মেয়র পরিষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে আনা হবে খুব শীঘ্রই, যাতে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা নিশ্চিত হয়। হেরিটেজ কনজ়ারভেশন কমিটি থেকে একটি ড্রয়িং সেট পাঠানো হবে বিল্ডিং বিভাগে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পরিবেশ ও হেরিটেজ বিভাগ থেকে বিল্ডিং বিভাগ জানানো হবে চূড়ান্ত মতামত। এর পর অনুমোদনের ভিত্তিতে ভবনের নির্মাণ বা সংস্কার কাজ শুরু করা যাবে।
এই উদ্যোগে উৎসাহিত হচ্ছেন বহু হেরিটেজ ভবনের মালিক ও সংরক্ষণপন্থীরা। তাঁদের আশা, এই সহজ ও সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার ফলে ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলির নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে এবং কলকাতার ঐতিহ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।