
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আরও বেশ কয়েকটা আসনে প্রার্থী দিল পদ্ম শিবির। আর এই প্রার্থী তালিকা দেখে সেই একটা গান বারে বারে মনে পড়ছে-” আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চ লো সখা আমি যে পথ চিনি না,,। আর এই সখার নাম যে নরেন্দ্র দামোদর মোদী তা আর বলতে হবে না। মাত্র ৪ টি আসন ছেড়ে বাকি সব আসনেই প্রার্থী ঘোষনা করেছে বিজেপি। তবে খুব বাস্তব, প্রার্থী দিলেও কোথাও যেন গোল দেওয়ার মতো মেসি বা রোনাল্ডো কে নামাতে পারল না বিজেপি। শুধু তাই নয়, দুই বিধায়ক কে নামাতে হলো লড়াইযে। তবে এর মধ্যে সব থেকে বড় চমক মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের আসন বদল। মেদিনীপুরের বদলে প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে টিকিট দেওয়া হলো বর্ধমান- দুর্গাপুর আসনে। যদিও গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে জয়ী হন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিযা। সূত্রের খবর, এবার এই কেন্দ্রে যথেষ্ঠ লড়াই এর মুখে পড়তে হবে দিলীপ ঘোষকে, এমনকী দ্বিতীয় বা র তিনি সাংসদ হবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। একটু চোখ বুলিয়ে নিলে বোঝা যাবে নদিয়ার হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার কে টিকিট দেওয়া হলো বর্ধমান- পূর্ব থেকে।
অন্যদিকে আসানসোলের বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পলকে। পাশাপাশি একাধিক কঠিন আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ও খোদ দলের কর্মীরাদের মনেও প্রশ্ন আছে। যেমন আসা যাক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী রায় চৌধুরীর কথায়। রায়গঞ্জ থেকে সরিয়ে টিকিট দেওয়া হলো দক্ষিণ কলকাতাতে । অতি বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বলবেন না যে এই আসন বিজেপির পক্ষে জে তা র জায়গা আছে। অপরদিকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দিলীপ ঘোষকে দেওয়া হলো বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন, অর্থাৎ জে তা আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো দিলীপ ঘোষকে। একই অবস্থা কৃষ্ণনগর আসনে হঠাৎ করে প্রার্থী করে দেওয়া হলো নদিয়ার রাজমাতা অমৃতা রায়কে, যিনি জীবনে কোনদিন বিজেপি করেন নি, উল্টে জেলাতে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। দলে যোগ দিয়েই প্রার্থী হলেন তিনি, যা নিয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা জুড়ে তুমুল বিক্ষোভ।
পাশাপাশি শ্রীরামপুর, থেকে শুরু করে বর্ধমান- পূর্ব কেন্দ্র,সব আসনে কার্যত অনেকটা দুর্বল প্রার্থী দিল বিজেপি। বর্ধমান- পূর্ব আসনে প্রার্থী করা হল হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকারকে। সূত্রের খবর, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির ভিতরে অসন্তোষ। একই ভাবে বসিরহাট এর প্রার্থী সন্দেশখালির ‘মুখ’ বলে পরিচিতি রেখা পাত্রকে। গুরুত্ব দেওয়া হয়নি স্থানীয় নেতা- কর্মীদের।
একই ভাবে দার্জিলিং থেকে প্রথমদিকে প্রাক্তন আমলা হর্ষবর্ধন সিঙলাকে টিকিট দেওয়ার হবে বলে অঘোষিতভাবে জানানো হলেও কার্যত রাজু বিস্তার চাপে পড়ে সে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয় এই নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে বিজেপির টিকিট লড়বেন রাজু বিস্তা সূত্রের খবর এই একই আসনে
নির্দল হিসাবে দাঁড়াতে পারেন এই প্রাক্তন আমলা। গোটা বিষয় নিয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ দাস এর ব্যখ্যা, ” এই প্রার্থী তালিকা বুঝিয়ে দিল তৃণমূল স্তরে আসলে বিজেপির কোনো সংগঠন সেভাবে তৈরী হয়নি। শেষ ধাপে যে তালিকা দেখলাম সেই তালিকা র নাম থাকা কয়েকজন ছাড়া বাকিদের দিয়ে ভোট যুদ্ধ জেতা খুব কঠিন। একটা দায় সারা গোছের প্রার্থী দেওয়া হলো । বুঝিয়ে দেওয়া হলো তৃণমূলের একাধিক সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের বা বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মুখের পাল্টাবিজেপির তেমন কোনো মুখ আরও ভালো বলতে গেলে প্রার্থী পর্যন্ত নেই। ”
অপরদিকে আরও এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিষেক দে বিশ্বাস এর বক্তব্য,” এই প্রার্থী তালিকা দেখে বোঝাই গেলো বিজেপিকে সেই মোদীর আইকনকে সামনে রেখেই ভোট লড়তে হচ্ছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে বাংলা তে কিন্তু এই ভাবে ভোট জেতা খুব মুস্কিল। আসলে বঙ্গ বিজেপি এখনও ভোটে লড়তে যে সংগঠন
দরকার তা এখনোও তৈরীই করতে পারে নি। এবং গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব তে জর্জরিত। তাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে বাইরে থেকে প্রার্থী এনে ভোটে নামাতে হচ্ছে হরিণঘাটা বিধায়ককে নিয়ে যেতে হচ্ছে বর্ধমান -পূর্ব কেন্দ্রে। আবার নতুন প্রার্থী না পেয়ে বিধায়ক বিধায়কদের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে শেষ যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হলো তাতে স্পষ্ট বাংলা থেকে আরও বেশি আসনের কথা বললেও আদবে কোথাও যেন ঢিলেঢালা সংগঠনের কারণে ময়দান থেকে সরে যাচ্ছে বিজেপি।”