
সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ঃ পরিবারতন্ত্র- না দেশের রাজনীতিতে এই শব্দটা আর অচেনা নয়। শতাব্দী প্রাচীন জাতীয় কংগ্রেসেকে বারবার এই পরিবার তন্ত্র নিয়ে খোচা দিছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে অমিত শাহ, শুভেন্দু অধিকারীরা। এতো গেল গোটা দেশের কথা। খোদ এই বঙ্গে এবার উঠে আসছে পরিবারতন্ত্র। তা সে তৃণমূল হোক বা কংগ্রেস, বিজেপি থেকে শুরু বামেরা পর্যন্ত। অর্থাৎ বাংলার ৪২ রি আসনের মধ্যে ১২ টি আসনেই এবার পরিবারতন্ত্রর ছোঁয়া।
সেই পরিবারের উপর ভরসা করেই ভোট বৈতরণী পার হচ্ছে বাম কংগ্রেস বিজেপি তৃণমূল। একটু ব্যাখ্যা করা যাক, বহুদিন ধরে একদিকে তৃণমূল অপরদিকে কংগ্রেসকে, পরিবার তন্ত্রের খোঁচা দিয়ে প্রায় প্রতিদিন নির্বাচনে বিধছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু সেই বিজেপিকেই দেখা গেলো পরিবারতন্ত্রের হাত ধরতে। তৃণমূল কংগ্রেসের থাকতে কার সাথে গোটা মেদিনীপুর জেলার বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন অধিকারী পরিবার তবে দল বদলে বিজেপিতে আসলেও গেরুয়া শিবিরে সেই একাধিপত্য বজায় রেখেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
ইতিমধ্যেই শুভেন্দুর দেখা দেখি তার প্রায় গোটা পরিবারই ফুল বদল করে এখন জোড়া থেকে পদ্মে শামিল। এখানেই শেষ নয়, এবারের লোকসভা নির্বাচনে নিজের ছোট ভাই কাঁথি পৌরসভার প্রাক্তন তৃণমূল চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারীকে প্রার্থী করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। অপর দিকে রাজ্যের শাসকদল কেউ এই পরিবার তন্ত্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয় এবারও ডায়মন্ডহারবার থেকে জোড়া ফুল টিকিটে প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি সম্পর্কে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। অপরদিকে উলুবেড়িয়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী আহমেদ সাজদা। আহমেদ যিনি এই কেন্দ্রে র প্রাক্তন সাংসদ সুলতান আহমেদএর স্ত্রী। একই ভাবে মথুরাপুর কেন্দ্র থেকে এই বারে ও প্রার্থী করা হয়েছে প্রতিমা মণ্ডলকে, যিনি বনগার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর এর কন্যা। আবার উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এর দিকেও একই ভাবে পরিবারতন্ত্রর আঙুল তোলাই যায় ইতিমধ্যেই যা নিয়ে রীতিমত বিস্ফোরক অভিযোগ করেন কুনাল ঘোষ, এমনকী এই ইস্যুকে সামনে রেখে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে সেই উত্তর কলকাতা থেকে প্রার্থী হওয়া তাপস রায়।
মতুয়া গড় বলে পরিচিত বনগা লোকসভার বিজেপি কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর আর তার ভাই সুব্রত ঠাকুর বিজেপির বিধায়ক।
অন্যদিকে ৩ টি আসনে কংগ্রেস এরও ভরসা সেই ‘পরিবারবাদ’। যেমন মালদহ (দক্ষিণ) এই কেন্দ্রে এই লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী ঈসা খান চৌধুরী, যিনি সম্পর্কে বরকত গনি খান চৌধুরীর ভাইপো এবং এই কেন্দ্রের দুই বারের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর পুত্র। আবার জঙ্গিপুর আসনে কংগ্রেস প্রার্থী মর্তুজা হোসেন বকুল। তিনি সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট মন্ত্রী আব্দুল সাত্তারের নাতি এবং প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার মৎস্য মন্ত্রী এবং মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার পাঁচবারের কংগ্রেস বিধায়ক আবু হেনার পুত্র।
অপরদিকে দক্ষিণ কলকাতার সিপিআইএম প্রার্থী সারিয়া শাহ হালিম একদিকে যেমন প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এর পুত্রবধূ তথা ফুয়াদ হালিমের স্ত্রী অপরদিকে শ্রীরামপুরের সিপিআইএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর পাঁচবারের প্রাক্তন বাম তথা সিপিআইএম বিধায়ক পদ্মনিধী ধরের নাতনি।