
অবশেষে ভারতবর্ষকে বিজেপি মুক্ত করতে বেঙ্গালুরুর বৈঠকে বিরোধীরা ইন্ডিয়া তৈরি করে ফেলেছেন। জোটের কাজকর্ম এগোতে এগারো জনের কমিটিও তৈরি করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে জোট বেশ জমজমাট। নিতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন, সীতারাম ইয়েচুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই উপস্থিত মঞ্চে। এমনকি নকশালপন্থী সিপিআইএমের লিবারেশনের নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও উপস্থিত।
কর্নাটকে কংগ্রেস সদ্য সদ্য জিতেছে। ফলে নিজেদের জেতা রাজ্যের রাজধানীতে বসা এই বিরোধী অধিবেশনে কংগ্রেস নেতৃত্বকে অনেকটা কনে কর্তার ভূমিকায় থাকতে হয়েছে। মঞ্চে অন্তত বিরোধী নেতারা বলেছেন মোদির-বিজেপির বিরুদ্ধে ভয় ও সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধীদলকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।
যদি ওখানে উপস্থিত সমস্ত দলের নেতারাই জানেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শরদ পাওয়ার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা সর্বভারতীয় জোটের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কোন তাস খেলবেন তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারবেন না।
সীতিরাম ইয়েচুরি ভাজপার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলছেন দেশ জুড়ে। কিন্তু সিপিএম কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করার কোন সম্ভাবনা নেই এটা বলেই দিয়েছেন সীতারাম। অন্য কোন রাজ্যে জয় শ্রীরাম পার্টির মোকাবিলার ক্ষমতা সীতারামদের নেই বলাই বাহুল্য।
তাহলে দাঁড়াচ্ছে টা কি? দাঁড়াচ্ছে এই মোদি বা বিজেপিকে হারাতে হলে কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পরপর দুটি রাজ্য হিমাচল প্রদেশ এবং কর্নাটকে জিতে সংসদীয় রাজনীতির পাটিগণিতে কংগ্রেস দান চালবার ক্ষেত্রে দুঘর এগিয়ে গেছে।
সামনে রাজস্থান ছত্রিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশে নির্বাচন। রাজস্থান এবং ছত্রিশগড়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় আছে। মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেস জিতেছিল। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্যদের বিশ্বাসঘাতকতায় সেখানে বিজেপির সরকার হয়েছে।
যদি কংগ্রেস এই তিনটি রাজ্যে ভালো ফল করতে পারে, তাহলে গোটা হিন্দি বলয়ে বিজেপি চাপে পড়ে যাবে। কারণ সে ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ ছাড়া কংগ্রেসের আর কোনো ঘাঁটি থাকবে না।
তার থেকেও বড় কথা গোটা হিন্দি বলয়েই বিজেপি বিরোধী রাজনীতির রাশ কংগ্রেসের হাতে চলে আসবে।
অখিলেশ যাদবদের কর্তৃত্ব উত্তর প্রদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। নিতীশ কুমাররের যতই উচ্চাশা থাক, তিনি বুঝে যাবেন সর্বভারতীয় প্রেক্ষিতে বিরোধী জোটের রাজনীতির সংখ্যা তার অনুকূলে নেই।
আর কংগ্রেস যদি নিজেকে টেনে এইভাবে আরো একবার পাদপ্রদীপের সামনে নিয়ে আসতে পারে তাহলে শিল্পপতিদের একাংশ যারা আম্বানি আদানিদের একচেটিয়া রমরমায় এই মুহূর্তে ক্ষুব্ধ তাঁরা অনেকে ভরসা পেয়ে কংগ্রেসের পিছনে এসে দাঁড়াতে রাজি হবেন।
বাতাসে ইতিমধ্যে গুঞ্জন আম্বানিরাও আদানিদের উথ্বান খুব একটা ভালো চোখে দেখছেন না। চিরাচরিত মারোয়াড়ী বনিক কুলের একটা অংশ, বিজেপির ওপর চটে রয়েছেন। নেহাৎ হিন্দুত্বের মায়াজালে কোনক্রমে আটকে রেখেছে তাই। না হলে বিদ্রোহ বহু আগেই প্রকাশ্যে আসতো।
রাহুল গান্ধীর সদ্য সমাপ্ত পদযাত্রা গোটা দেশজুড়ে একটা বিকল্প রাজনীতিকে সামনে আনতে পেরেছে। শোনা যাচ্ছে অনতিবিলম্বে রাহুল গান্ধী পশ্চিম থেকে পূর্ব ভারতের উদ্দেশ্যে আর একটা পদযাত্রা বার করবেন।
সব মিলিয়ে কংগ্রেস লড়াইতে ফিরেছে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বিজেপি তথা মোদিকে হারাতে হলে কংগ্রেসকে এই লড়াইটা জিততে হবে।কংগ্রেসকে অপ্রাসঙ্গিক করে বিজেপি বিরোধী লড়াইকে গোটা দেশ জুড়ে প্রাসঙ্গিক গড়ে তোলা যাবে না।