
বিপ্লব দাশ : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর নিয়ে নানাজনে নানান কথা বলছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বিনিয়োগের নামে মুখ্যমন্ত্রীর মাঝেমাঝে বিদেশ সফরে বাংলার কি লাভ ? বিরোধীরা বলছেন, যেভাবে তিনি বিদেশে গিয়ে স্বপারিষদ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাতে টান পড়ছে রাজকোষে। স্বর চড়িয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে সরকারি সফরে যাওয়ার অনুমতি না পান তাঁর জন্য তিনি নাকি বিদেশমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।
কেউ বলছেন মমতা বিদেশে গিয়ে দেশকে খাটো করছেন, কেউ বলছেন বিদেশে গিয়ে মমতা নিজেকে খাটো করছেন। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে মমতাই যেন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি বিদেশ গেলেন। এবং বিদেশে গিয়ে রাজ্যের অর্থ অপচয় করছেন। অন্য কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি বিদেশে যান না ? এই বাংলা থেকে কি অন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ যাননি ? জ্যোতি বসুও তো বহুবার বিদেশ সফর করেছেন। মমতা লন্ডনে গিয়ে যে হোটেলে উঠেছিলেন সেই সেন্ট জেমস কোর্ট-এই উঠতেন জ্যোতি বসুও। জ্যোতিবাবুর চিন সফরে খাবার পাতে জ্যান্ত মাছের কাহিনী একসময় আলোচ্যের বিষয় ছিল। জ্যোতিবাবুর মন্ত্রিসভার অনেকেই বিদেশ সফর করেছেন। কই তখন তো এ নিয়ে কেউ হৈ চৈ করেননি ! এবার তাহলে হঠাৎ কেন গেল গেল রব ? প্রধানমন্ত্রীর এত এত বিদেশ সফর নিয়েও কারুর কোনো হেলদোল নেই। কেউ তো বলছেন না, ২০২২ থেকে ২০২৪, এই দু বছরে নরেন্দ্র মোদী বিদেশ গিয়ে রাজকোষ থেকে খরচ হয়েছে ১৭৭ কোটি টাকা !
বিষয়টা আসলে অন্যত্র। কিছুটা বলতে হয় তাই বলা, বাকিটা রাজনীতির সমসাময়িক সংস্কৃতি। আসলে এদেশ তো বটে, সারা বিশ্বে এখন নেগেটিভ রাজনীতির হুল্লোড় চলছে। তাঁরা মনে করছেন সাধারণ মানুষের দাগ কাটে নিন্দায়, কুৎসায়। এটা রাজনীতির অবনমন, না যুগের হাওয়া সেই যুক্তিতক্কে যাচ্ছি না। কথা হল, দেশের সম্মান। যাঁরাই কোনো কর্মসূচিতে বিদেশে যান তাঁরা আসলে দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন এটা মাথায় রাখা উচিত। যে কারণে জাতীয় রাজনীতিতে যতই কাদা ছোঁড়াছুড়ি হোক না কেন, বিদেশ নীতি নিয়ে এককাট্টা হন সবাই। এটাই স্বদেশীয়ানা, এটাই ভারতীয়তা। দুর্ভাগ্যের বিষয় তা দেখা গেলো না লন্ডনে ভারতীয় পড়ুয়াদের মধ্যে।