
স্পোর্টস ডেস্ক :তথাকথিত অনভিজ্ঞ দল নিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপের প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি-র বিরুদ্ধে জিতে অনেককেই অবাক করে দেওয়ার পর এ বার মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সামনে সেমিফাইনালে শক্তিশালী এফসি গোয়া। যারা আইএসএলের সেমিফাইনালে হেরে ছিটকে গিয়েছিল, তারা এ বার সুপার কাপের ফাইনালে ওঠার সুযোগ বোধহয় হাতছাড়া করতে চাইবে না। তাই সবুজ-মেরুন বাহিনীর সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে।
কোয়ার্টার ফাইনালে সম্পুর্ণ নতুন কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নেমে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, তা ছিল অভাবনীয়। তাদের বোঝাপড়া ও গোছানো ফুটবল দেখে মনেই হয়নি দলটা একসঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে। যাঁরা আইএসএলে নিয়মিত সুযোগ পাননি, বেশিরভাগ সময়েই রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন, মূলত তাঁদের নিয়ে ও জুনিয়র ফুটবলার, যারা মূলত কলকাতা লিগে ও রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন ডেভলপমেন্ট লিগে খেলেছে, এই টুর্নামেন্টে তাদের নিয়েই খেলতে এসেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
এঁদের নিয়ে গড়া দল কলিঙ্গ সুপার কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ২-১-এ হারিয়ে সেমিফাইনালে এফসি গোয়ার মুখোমুখি হতে চলেছে। দুই নির্ভরযোগ্য তারকা সহাল আব্দুল সামাদ ও আশিক কুরুনিয়ান সেই ম্যাচে ভাল পারফরম্যান্স দেখান। প্রথম গোলটি করেন সহাল এবং দ্বিতীয় গোলটি আসে আশিকের ক্রস থেকে। দলের জুনিয়রদের মধ্যে নজর কেড়ে নেন সালাহউদ্দিন আদনান ও সুহেল ভাট। প্রথমজনের ক্রসে গোল করেন সহাল ও সুহেল দ্বিতীয় গোলটি করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।মাঝমাঠ থেকে যেমন দলকে নেতৃত্ব দেন দীপক টাঙরি, তেমনই দলের মাঝমাঠকেও শক্তি জোগান তিনি। সুহেল ভাট থেকে শুরু করে অভিষেক, আমনদীপ, ধীরজ, সৌরভরা যে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য মরিয়া ছিলেন, তা তাদের পারফরম্যান্সেই তা বোঝা যায়। গোটা দলটার মধ্যে যেমন ছন্দ ও বোঝাপড়া দেখা গিয়েছিল সে দিন, বুধবারও যদি সে রকমই বোঝা পড়া দেখা যায়, তা হলে এফসি গোয়াকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে।
আইএসএলের সেমিফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে হেরে ফাইনালের দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার পরে এ বার তারা যে কলিঙ্গ সুপার কাপের ফাইনালে উঠতে ও চ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া এফসি গোয়া, তা ভুবনেশ্বরে পৌঁছেই জানিয়ে দেয় এফসি গোয়া। কিন্তু তা করতে হলে তাদের আগামী দুই কঠিন ধাপ সাফল্যের সঙ্গে পেরতে হবে। ফলে যথেষ্ট সচেতন ভাবে এগোতে চাইছে তারা। আপাতত তাদের লক্ষ্য মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারানো।
কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে তারা পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও দুর্দান্ত লড়াই করে খেলায় ফিরে আসে ও ম্যাচের শেষে জয়ের হাসিও হাসে। বিরতির পর পাঞ্জাব এফসি পুলগা ভিদালের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের শেষ দিকে বোরহা হেরেরা (৮৮ মিনিটে) ও মহম্মদ ইয়াসিরের (সংযুক্ত সময়ের ৩ মিনিটে) পরপর দুই গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। তাদের এই রোমাঞ্চকর জয়ই বুঝিয়ে দেয়, ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল না ছাড়ার মানসিকতা ও দক্ষতা, দুটোই তাদের যথেষ্ট রয়েছে। বুধবার মোহনবাগানকে এই কঠিন মানসিকতার দলের বিরুদ্ধেই লড়াই করে জিততে হবে।
আইএসএলে জোড়া খেতাবজয়ী দলে যাঁরা নিয়মিত খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে কলিঙ্গ সুপার কাপে না আছেন কোনও বিদেশি তারকা, না আছেন কোলাসো, মনবীর, আশিস, অনিরুদ্ধ, শুভাশিসদের মতো সেই দলের নির্ভরযোগ্য তারকারা। রয়েছেন সহাল, আশিক, দীপেন্দু বিশ্বাস, দীপক টাঙরি, ধীরজ সিং, অভিষেক সূর্যবংশী, গ্ল্যান মার্টিন্স, অমনদীপ, সৌরভ ভানওয়ালা, সুহেল ভাট ও রবি বাহাদুর রাণা। বাকিরা সবাই যুব দলের সদস্য। দলের সমস্ত বিদেশিদের ছুটি দিয়ে নিজেও দেশে ফিরে গিয়েছেন কোচ মোলিনা। ভুবনেশ্বরগামী দলে নবাগত পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড নুনো রেইসকে রাখা হয়েছে। তিনিই এই দলের একমাত্র বিদেশি। সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম ম্যাচে খারাপ খেলেননি তিনি। তবে দলের রক্ষণের নেতৃত্বে ছিলেন মূলত দীপেন্দু বিশ্বাস। যিনি তাঁর কাজে সফলও হন।
তবে এফসি গোয়া অবশ্য আইএসএলে খেলা দলের প্রায় সব খেলোয়াড়কে নিয়েই ভুবনেশ্বরে এসেছেন। ফরোয়ার্ড ইকের গুয়ারৎজেনা, দেজান দ্রাজিচ, মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ, উদান্ত সিং, বোরহা হেরেরা-রা যেমন সে দিন শুরু থেকে খেলেন, তেমনই রক্ষণ সামলান সন্দেশ ঝিঙ্গন, ওদেই ওনাইন্দিয়া, আকাশ সাঙ্গওয়ানরা। গোলেও ছিলেন হৃত্বিক তিওয়ারি। ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ, জয় গুপ্তা, সাহিল তাভোরার মতো খেলোয়াড়রা রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে পরে নামেন। দ্বিতীয় গোলদাতা ইয়াসিরও নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ন’মিনিট আগে নেমে সংযুক্ত সময়ে গোল করেন।
আইএসএলে প্রথম ম্যাচে এফসি গোয়া ২-১-এ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে হারানোর পরে ফিরতি লিগে ২-০-য় জিতে সেই হারের বদলা নিয়ে নেয় সবুজ-মেরুন বাহিনী। প্রথম ম্যাচে ব্রাইসনের জোড়া গোলের একটি শোধ করেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। ঘরের মাঠে মোহনবাগানের গ্রেগ স্টুয়ার্ট সংযুক্ত সময়ে জয়সূচক গোল করার আগে বরিস সিংয়ের নিজ গোল তাদের এগিয়ে দিয়েছিল।
ব্লাস্টার্সের মতো গোয়াও যেখানে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে নামছে, সেখানে সবুজ-মেরুন বাহিনীর কাজটা বেশ কঠিন হতে চলেছে, তা মেনে নিতে দ্বিধা করেননি বাগান-বাহিনীর কোচ বাস্তব রায়। তবে তিনি চান তাঁর দলের ছেলেরা বুধবার ম্যাচটা উপভোগ করুক। হার-জিতের ভাবনা তাঁদের মাথায় চাপাতে চান না তিনি। মঙ্গলবার বাস্তব সাংবাদিকদের বলেন, “দলের ছেলেদের বলেছি ম্যাচটা উপভোগ করতে এবং দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে। দলের সবাই ফিট ও কাল খেলার জন্য তৈরি। নিঃসন্দেহে কেরালা ব্লাস্টার্সের চেয়ে এফসি গোয়া বেশি শক্তিশালী। ফলে আমাদের কাজটা সোজা হবে না। তবে ওদের বিরুদ্ধে খেলার জন্য আমাদের ছেলেরা তৈরি”।