
স্পোর্টস ডেস্ক :সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে যে যে ভুলগুলি করেছেন তাঁর দলের ফুটবলাররা, তা নিয়ে বেশি ভাবনা চিন্তা না করে সোমবারের ম্যাচে ঘরের মাঠে সমর্থকদের শুভেচ্ছা সঙ্গে করে নিজেদের আসল খেলা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চান মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হোসে মোলিনা। তবে অন্তত দু’গোলে জিততে গেলে যে প্রতিপক্ষের গোলের সামনে তাঁর দলের খেলোয়াড়দের আরও ধারালো ও তৎপর হতে হবে, তা স্বীকার করে নিলেন স্প্যানিশ কোচ।
রবিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখন শুধু কালকের ম্যাচ নিয়ে ভাবার সময়। যা হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে আর ভাবছি না। তবে গত ম্যাচের ভুলগুলো অবশ্যই বিশ্লেষণ করেছি এবং সেগুলো শোধরানোর চেষ্টাও করছি। আমাদের এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রতিপক্ষের গোলের সামনে আমাদের আরও সফল হতে হবে। গোল খেলে চলবে না। এই পার্থক্যটাই তৈরি করতে হবে। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে আশা করি, আমাদের ছেলেরা তা পারবে। ওদের ওপর আমার ভরসা আছে।”
গোলের প্রচুর সুযোগ যে হাতছাড়া করছেন তাঁর ফুটবলাররা, তা মেনে নিয়ে মোলিনা বলেন, “এটা ঠিকই যে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গোলের অনেক ভাল ভাল সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আমরা ওদের গোলের সামনে সফল হতে পারিনি। কাল আমাদের ওই জায়গায় সফল হতে হবে। প্রতিদিনই আমরা উন্নতি করার চেষ্টা করি। মরশুমের প্রথম দিন থেকেই করছি। কাল এই ব্যাপারে আরও উন্নতি করার চেষ্টা করব।
তিনি নিজে যেমন মাঠে সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করেন, তাঁর ফুটবলারদেরও তেমনই মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলার পরামর্শ দেন মোলিনা। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও মাথা ঠাণ্ডা রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, “শান্ত থাকাটা যেমন জরুরি, তেমন লড়াইটাও জরুরি। জামশেদপুরের মতো ভাল দলের বিরুদ্ধে সফল হতে গেলে ওদের বক্সের মধ্যে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, ওদের এত খেলোয়াড় বক্সের মধ্যে থাকে যে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন হয়ে যায়। সেজন্যই মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে আমাদের। তবে পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে চাপে রাখাও দরকার। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।”
‘সমর্থকেরাই সবচেয়ে বড় শক্তি’
এ মরশুমে ১২টির মধ্যে ১১টি হোম ম্যাচেই জয় পেয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। শুধু প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল তারা। ঘরের মাঠে এমন কী বাড়তি শক্তি পান, যার ফলে যুবভারতীতে একটিও ম্যাচ হারেনি তারা, জানতে চাইলে মোলিনা জানান, “হোম ম্যাচে সমর্থকরাই আমাদের সবেচেয়ে বড় শক্তি। ওদের জন্য আমাদের মাঠে খেলতে নেমে আমাদের প্রতিপক্ষরাও স্বস্তিতে থাকতে পারে না। তবে ঘরের মাঠে আমাদের মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন হয় না। বাইরে যে রকম মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামি, ঘরেও তাই। প্রতিপক্ষ বিশেষে কৌশল বদলাই ঠিকই। কিন্তু উদ্দেশ্য একই থাকে। তবে ঘরের মাঠে সমর্থকেরা যে ভাবে আমাদের জন্য গলা ফাটান, তাতে আমাদের খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং প্রতিপক্ষরা চাপে পড়ে যায়। সমর্থকদের বলব, কাল খেলাটা উপভোগ করতে। যেন কোনও ভাবে মেজাজ না হারায় তারা।”
চোটের জন্য গত ম্যাচে খেলতে পারেননি নির্ভরযোগ্য দুই খেলোয়াড় মনবীর সিং ও আপুইয়া। সোমবারের ম্যাচে তাদের খেলানোর খুব চেষ্টা চলছে বলে জানান মোলিনা। বলেন, মনবীর ও আপুইয়াকে খেলানোর চেষ্টা করছি আমরা। কোচ, মেডিক্যাল স্টাফ সবাই মিলে চেষ্টা করছি, যাতে কাল ওদের খেলানো যায়। এখনও একটা ট্রেনিং সেশন পাব, তাতে দেখব ওরা কী রকম খেলে। তবে ওদের নিয়ে আমি আশাবাদী”।
তবে প্রতিপক্ষের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে, আশুতোষ মেহতার এই ম্যাচে খেলতে না পারা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি শিল্ডজয়ী দলের কোচ। বলেন, “ওদের নিয়ে আমি বলতে পারব না। আমি শুধু নিজের দল নিয়ে ভাবি। তাই ওদের কারা না খেললে কী হবে, তা আমি ঠিক জানি না।”জামশেদপুরের মাঠে স্থানীয় পুলিশ এবং সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোহনবাগানের সমর্থকেরা। কারও মাথা ফেটে গিয়েছিল, কারও গায়ে-হাতে চোট লেগেছিল। মার খাওয়া পাঁচ সমর্থককে এ দিন আনা হয়েছিল সাংবাদিক বৈঠকে। মোলিনা এবং ফুটবলার জেমি ম্যাকলারেন তাঁদের হাতে ফুলের তোড়া এবং সোমবারের ম্যাচের ভিআইপি টিকিট তুলে দেন।