
নিজস্ব সংবাদদাতা, মুর্শিদাবাদ : সোমবার থেকে তিনদিনের মুর্শিদাবাদ সফরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, সফরের শুরুতেই সুতি, সামশেরগঞ্জ-সহ একাধিক হিংসা কবলিত এলাকায় তাঁর পরিদর্শন করার কথা। এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তুলে দেবেন আর্থিক সহায়তাও। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন “এখন সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। মানুষ আর বিশ্বাস করে না।”
রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের হাতে সরাসরি তুলে দেবেন সরকারি সুবিধা।
ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানেও যাবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবেন। উল্লেখ্য, এপ্রিলে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ ঘিরে মুর্শিদাবাদে অশান্তি ছড়ায়। প্রাণ হারান তিনজন। সেই ঘটনার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দাবি জানাচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিনি ধুলিয়ান ও সামশেরগঞ্জ সফরে যাবেন। জানিয়েছিলেন, যাঁদের ঘরবাড়ি পুড়েছে, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকারের আবাসন প্রকল্পে নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কোন প্রকল্পের উদ্বোধন ও কোথায় শিলান্যাস হবে, কী সুবিধা উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে জেলা প্রশাসন প্রায় সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগেই সামশেরগঞ্জ থানার প্রাক্তন ওসি শিবপ্রসাদ ঘোষ ও সেকেন্ড অফিসার জালালউদ্দিন আহমেদকে সাসপেন্ড করেছে পুলিশ প্রশাসন। অশান্তির পর তাঁদের ক্লোজ করা হয়েছিল, এবার নেওয়া হল আরও কড়া পদক্ষেপ।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগের দিন রবিবার, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ওয়াকফ অশান্তি নিয়ে রিপোর্ট জমা দেন। সেই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে শনিবার এই সফর নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতচিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্য সময় নিচ্ছেন। এখন দেখাতে চাইছেন কিছুই হয়নি। মানুষ আর বিশ্বাস করে না।”
এছাড়া, সোমবারই পাক ও বাংলাদেশি নাগরিকদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর দাবিতে কর্মসূচি নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, “পাকিস্তানি নাগরিকরা অনলাইনে বিয়ে করে এদেশে থেকে যাচ্ছে। এবার সবাইকে ফেরত পাঠানো হবে।” এছাড়াও, জাফরাবাদে খুন হওয়া বাবা-ছেলের পরিবারের আশ্রয়ের প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন, তাঁদের মুখ বন্ধ রাখতে পুলিশ চাপ দিচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দুইদিনের মুর্শিদাবাদ সফরের প্রধান কর্মসূচিগুলির তালিকায় রয়েছে :
১. সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানসহ একাধিক এলাকা ঘুরে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী।
২. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও দোকানদারদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে তুলে দেবেন আর্থিক সহায়তা।
৩. যাঁদের ঘরবাড়ি পুড়েছে, তাঁদের জন্য সরকার নতুন ঘর নির্মাণ করে দেবে।
৪. জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
৫. বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের হাতে সরাসরি তুলে দেবেন সুবিধা।
৬. সফরের সময় বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই সফর ঘিরে জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের নজর এখন মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ও তার পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।