
তাপস মহাপাত্র : আপ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দিল্লিতে রাজনৈতিক সমীকরণাটা সামনে এসে পড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বিজেপির ভোট ৭.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫.৮ শতাংশে। আপ-এর ভোট প্রায় ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩.৮-এ। ফারাক মাত্র ২ শতাংশ। আর এতেই এতবড় বিপর্যয় আম আদমি পার্টির। দিল্লির রাজনীতিতে তাই হিসেবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কংগ্রেসের ৬.৪ শতাংশ ভোট। দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস-আপ জোট হলে এবারও বিজেপির কাছে অধরা থেকে যেত দিল্লি।
কথা হল, ক্ষমতা দখলের লড়াইতে কি তাহলে কেজরিওয়ালের কৌশলগত ভুল ছিল? কারণ, ভোট প্রক্রিয়ার শুরুতেই আপ জানিয়ে দিয়েছিল, তারা জোটে যাবে না। কেন যাবে না? কেনই বা কংগ্রেস আগ্রহ দেখাল না, বিজেপি কী ভাবে এই সুযোগটা কাজে লাগালো- এর মধ্যেই রয়েছে এবার দিল্লি নির্বাচনের প্রাণভোমরা। আসলে এখানে কাজ করেছে, আম আদমি পার্টির আত্মতুষ্টি, কংগ্রেসের সুযোগ সন্ধান আর বিজেপির ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তদের কাছে আপকে খাটো করার কৌশল। কংগ্রেস ও বিজেপি তাদের স্ট্র্যাটিজিতে সফল হয়েছে। হেরেছে আপ-এর আত্মতুষ্টি।
এখন প্রশ্ন হল কিসের সেই আত্মতুষ্টি। তা হল- দিল্লির এক বিশাল অংশের নিচুতলার ভোটার, যারা আপ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার উপভোক্তা। আপ-এর প্রাপ্ত ভোটের হিসেব বলছে এই নিচুতলার ভোটাররা কেজরিওয়াল থেকে মুখ ফেরায়নি। আপ-এর প্রাপ্ত ভোট সে কথাই বলে। যে দুই শতাংশ ভোটের ফারাক, তা মনে করা হচ্ছে এক্কেবারে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের থেকে। দুটি কারণ- একদিকে ভোটের ঠিক আগে কেন্দ্রীয় বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা আয়ের উপর কর ছাড়ের ঘোষণা, অন্যদিকে বিজেপির লাগাতার প্রচার যাতে আপ নেতাদের চরিত্র হননের যাবতীয় চেষ্টা। ফলে দিল্লির মধ্যবিত্ত ভোট ব্যাঙ্ক থেকে বিজেপি ২ শতাংশ ভোট নিজের পক্ষে টানতে পারায় চিত্রটা আমূল বদলে গেল। ২৭ বছর পর রাজধানীতে ক্ষমতায় ফরল বিজেপি। যেটা আগে বুঝতে পারেননি আপ সুপ্রিমো।
ফলে এখানে আরেকটা প্রশ্ন, এই সুযোগে দিল্লির ক্ষমতাসীন বিজেপি কি আপ-এর এই খয়রাতি রাজনীতি মেনে নেবে? কারণ, খয়রাতির সঙ্গে বেঁধে আছে আপ-এর ভোট ব্যাঙ্ক। যা না টানতে পারলে দিল্লিতে বিজেপির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যদিও ভোটের আগে থেকে বিজেপি বরাবরই কেজরীর ‘খয়রাতি সংস্কৃতি’র বিরোধিতা করে গিয়েছে। কিন্তু সরকার আর রাজনীতি এক নয়, সুযোগ সুবিধায় কাটছাট করলে দিল্লিতে নিজেদের জনসমর্থন বৃদ্ধিতে আঘাত পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। তাই দিল্লি বিজেপির কোনো কোনো নেতা ঢোক গিলতে বাধ্য হচ্ছেন। বলছেন, কেজরীর আমলের জনমোহিনী প্রকল্প বন্ধ না করাই ভালো। তাই একটু সংশোধিত পথে তাঁরা এর প্যাকেজিং চাইছেন।
দিল্লিতে বিজেপির টিকে থাকা, এবং কংগ্রেসের মাথা গোঁজার আসল চাবিকাঠি এখানেই। ফলে ভোট শেষ হয়েও হল না শেষ। কার্যত তা চলবে আগামী পাঁচ বছর ধরে।