
বিপ্লব দাশ : মণিপুর বিধানসভা অধিবেশনের আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ‘বাধ্য হয়েই’ সরে দাঁড়ালেন বীরেন সিং। কারণ হিসেবে যতই অঙ্ককে টেনে আনা হোক না কেন, এই রাজনৈতিক সংকটের পিছনে আসলে রয়েছে বিজেপির প্রকৃত নীতি নির্ধারণের ব্যর্থতা। শুধুমাত্র ম্যাজিক ফিগার দিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের কর্তৃত্ব যে সম্ভব নয় এটা বোঝা উচিত ছিল।
যেহেতু মণিপুরের সংকট সেখানকার জনজাতি সমস্যাকে ঘিরে, তাই শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে তার সমাধান সম্ভব নয়। ১৯৪৯ সালে মণিপুরের অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই চলছে এই অশান্তি। যাকে ঘিরে উত্তরপূর্ব ভারতের সীমান্ত বরাবর চারটি ছোটো রাজ্য হানাদারদের সহজ করিডোর বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মহল। অথচ স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের অতি নজর কাশ্মীর সীমান্তে। কিন্তু বাস্তবে কাশ্মীরের চেয়ে আরও গূঢ় স্পর্শকাতর পরিস্থিতি উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্তবর্তী চার রাজ্য মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশ ও নাগাল্যান্ড-এ। অথচ এই অঞ্চলের বৈচিত্র্য এবং ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা প্রায়শই এটিকে “পেরিফেরাল” স্থান হিসাবে চিত্রিত করেছে, যার ফলে নীতিগত অবহেলা চলে আসছে। ফলে এই ছোট্ট রাজ্য মণিপুরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন এবং আদিবাসীদের সঙ্গে উপত্যকার বৈষ্ণবী হিন্দুদের বিভাজন কোনো স্থিতিশীল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিতে পারছে না। রাজ্য সরকারের জন্য পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। যা মুখমন্ত্রী বীরেন সিং-এর আমলে চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে গিয়ে তিনি যদি মাথায় রাখতেন, কেন মেইতেইরা কয়েক দশক ধরে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্বের জন্য লড়ছে, তাহলে এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদও খোয়াতে হত না তাঁকে। কারণ হিসেবে তুলে ধরা যায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে পামবেইয়ের নেতৃত্বে কেন্দ্রের সঙ্গে ইউএনএলএফের শান্তিচুক্তি। সেই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ চুক্তি সইয়ের মুহূর্তকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছিলেন। অথচ এর কিছুদিন পর পামবেই সহ ইউএনএলএফ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সুরাক্ষা বাহিনী। যার মধ্যেই নিহিত ছিল মণিপুরের রক্তক্ষয়ী হিংসা।
মণিপুরের দীর্ঘস্থায়ী সংকট, যা জাতিগত সহিংসতা, সশস্ত্র রাজনৈতিক আন্দোলন, বিদ্রোহ এবং বিচ্ছিন্নতা দ্বারা চিহ্নিত, ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের শাসনব্যবস্থায় পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। কৌশলগত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও, নজর দেয়নি কেন্দ্র। দায়িত্বশীল হয়নি রাজ্য সরকারও। বরং হিংসাকে বিভাজনের কাজে লাগিয়ে চেষ্টা চলেছে রাজনৈতিক হিসেব নিকেষ। এ কারণেই মণিপুরে “রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব” জাহির করতে গিয়ে ভারত সরকারের বিচক্ষণতার অভাব দেখা দিয়েছে। যার শিকার বীরেন সিং।