
বিপ্লব দাশ: মণিপুরের অস্থিরতাকে সামাল দিতে আপাতত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটা আসলে বিজেপির সাময়িক নিস্কৃতির পথ। এতে আদৌ কোনো সমাধান আছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। স্বয়ং অমিত শাহ্ও তা বিলক্ষণ বুঝছেন নিশ্চয়ই। কারণ, সমস্যা যে গভীরে রয়েছে তাকে বাইরে এনে জট খোলার কাজটি সহজ নয়। বিজেপির লৌহ মানবের হাতে যে এর কোনো মানদণ্ড নেই তা তিনি হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছেন হয়তো। অন্তত এটা মেনে নেওয়া উচিত, এই সংকট কোনো চটুল রাজনীতি দিয়ে মিটবে না। তা হলে, এর আগে আরও ১০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন হত না এই ছোট্টো রাজ্যে।
সংবিধানের ১৬৩ অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের বিস্তৃত ক্ষমতার কথা বলা নেই। রাজ্যপালকে তার দায়িত্ব পালনের সময় মন্ত্রী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করতে হয়। তিনি কেবল তখনই তার বিবেচনার ভিত্তিতে কাজ করতে পারেন যখন তাকে তা করতে হবে। তাই রাজ্যপালের বিবেচনার অধিকার থাকলেও, এটিকে ‘সাংবিধানিক’ বিবেচনার ভিত্তিতে বোঝা উচিত। তাই মণিপুরে চলতি সংকট মেটাতে মণিপুরের রাষ্ট্রপতি শাসন কতটা কার্যকরী হবে তা নিশ্চয়ই গত ১০ বারের পরীক্ষা নিরীক্ষা শিক্ষা নেওয়া উচিত। বিজেপি যে তা বোঝে না এমনটা ভেবে নেওয়াও ঠিক নয়। ফলে এই রাষ্ট্রপতি শাসন আসলে নিজেদের অন্দরের ক্ষোভকে জোড়াতাপ্পতি দেওয়ার ব্যবস্থা কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ রাষ্ট্রপতি শাসন বিজেপির রাজনৈতিক নীতিরই বিরুদ্ধ।
তাই বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে যে অনিশ্চয়তা চলছে তা মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংকে সরিয়েই সমাধান সম্ভব নয়। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়তো মনে করছে সমস্যা নিরসনের জন্য ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময় পাওয়া গেল। কিন্তু তা কি যথেষ্ট ? সমস্যার যে গভীরতা তাতে রাজনীতির চটুলতা দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। তাই মণিপুর সমস্যা শুধু উত্তর পূর্ব ভারতের জাতি সমস্যা নয়, বিজেপির কাছে এটি একটি জাত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফলে ২০২৩ সাল থেকে বিজেপির গলায় মণিপুরের কাঁটা একই জায়গায় আটকে রইল। বিজেপির আশঙ্কা এর প্রভাব উত্তরপূর্ব ভারতে তাদের আধিপত্যকে না খর্ব করে। তা যদি হয়, তাহলে এটা শুধু মণীপুর নয়, প্রভাবিত করবে ‘সেভেন সিস্টার’কে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মণিপুর সংকট আসলে বিজেপির নীতি নির্ধারণেরই প্রকৃষ্ট ব্যর্থতা।