
বিপ্লব দাশ : প্রতিটি আত্মহত্যার পিছনে কোনো না কোনো হতাশা কাজ করে। সেটা বাস্তবিক জীবনেরর লড়াই থেকে হোক, কিংবা মানসিক। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন বিষয়টি সবসময় দুর্ভাগ্যজনক। সেই আদিকাল থেকে চলে আসছে মানুষের এই ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষ কখনো কখনো এই পথ বেছে নিয়েছে। যার প্রলয়ঙ্কর কাহিনি আমরা জানি সতীর আখ্যান থেকে। একে যদি সমাজের একটি দুর্ঘটনা ধরে নেওয়া যায়, তাহলে তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু তার প্রবণতা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে তাকে আর দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা ঠিক নয়। তা একটি সামাজিক ব্যধিতে এসে দাঁড়ায়।
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০০০ মানুষ আত্মহত্যার কারণে মারা যান। গত শতকের শেষ ৮ বছরকে একটি সময়সীমা ধরে নিয়ে হেলথ অফ দ্য ন্যাশনের লক্ষ্য ছিল এই মৃত্যুর হার অন্তত ১৫ শতাংশ কমানো। আত্মহত্যার হার কমাতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যার অর্থ হল আত্মহত্যাকে যাতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি মানসিক রোগ হিসেবে দেখা হয়।
আত্মহত্যা করতে পারেন এমন ব্যক্তির যে মানসিক অবস্থা আন্দাজ করতে পারেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সে বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন বার্গেস এবং হাটন। তাঁদের দাবি, যাঁরা আত্মহত্যা করেন তাঁদের সকলেই মানসিকভাবে অসুস্থ নন। কারণ, মানসিক অসুস্থতাকে সবসময় স্বাভাবিক যন্ত্রণা থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা করা যায় না। ডঃ চাবোটের মামলা এই বিষয়ে আমাদের কিছু শিক্ষা দেয়। ডঃ চাবোট একজন ৫০ বছর বয়সী সমাজকর্মীকে আত্মহত্যা করতে সাহায্য করেছিলেন, এমন একটি মামলা উঠেছিল নেদারল্যান্ডস সুপ্রিম কোর্টে। আদালত কিন্তু এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। চাবোটের মামলার পর ডাচ সোসাইটি অফ সাইকিয়াট্রিস্টস কমিটি যে অবস্থান নিয়েছিল তা এরকম- আত্মহত্যাকে একটি অগ্রাধিকারমূলক মনোরোগ সংক্রান্ত ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। বরং আত্মহত্যা মানসিকতা কোনো ইঙ্গিত দেয় কিনা তা নির্ধারণ করার সময় একজন ব্যক্তি কতটা স্বাধীন ইচ্ছা প্রকাশ করছেন এবং তার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বাসের মূলে রয়েছে কোনও শক্তিশালী দার্শনিক বা নীতিগত যুক্তির পরিবর্তে অসদাচরণের ভয়, কারণ এটা স্পষ্ট যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সময়ে সময়ে এমন ঘটনার মুখোমুখি হন যেখানে আত্মহত্যা একটি যুক্তিসঙ্গত বিকল্প।
ভারতেও এটি একটি অন্যতম প্রধান জাতীয় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০২২ সালে ১.৭১ লাখ আত্মহত্যা ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ২০২১-এর তুলনায় ৪.২ শতাংশ বেশি, ২০১৮ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ২৭ শতাংশ। ২০২২ সালে দেখা গিয়েছে প্রতি এক লাখে আত্মহত্যার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৪ শতাংশ।
এই যে কলকাতা কিংবা অন্যান্য জেলা থেকে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা দেখা যাচ্ছে তা কোনো নতুন প্রবণতা নয়। কিন্তু এই ব্যধি থেকে মুক্তির উপায় কি ? গবেষণায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ৪২ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছেন। প্রশ্ন একটাই, ‘আত্মহত্যার ইচ্ছা কি প্রাথমিক ভাবে একটি মনের রোগ ? আই এইচ এম ই-এর বিশিষ্ট লেখক মোহসেন নাঘভি বলেছেন, আত্মহত্যার কলঙ্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকারের বাধা দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।